আসানসোলে কয়লা কারবারির বাড়িতে গুলি চলার ঘটনা, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা পুলিশের, অভিযুক্ত বাবা ও ছেলে
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে, বর্তমানে জামিনে মুক্ত থাকা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কয়লা কারবারি জয়দেব মন্ডলের বাড়িতে গুলি চলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করলো পুলিশ । শুক্রবার বিকেলে হওয়া এই ঘটনায় আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ একটি সুয়োমোটো বা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে। এই মামলায় এফআইআরে পুলিশ জয়দেব মন্ডলের ছোট ভাই বুদ্ধদেব মন্ডল ও তার ছেলে প্রদীপ মন্ডলকে অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে। এই ঘটনায় জয়দেব মন্ডলের মেজ ভাই সুখময় মন্ডলের স্ত্রী চৈতালি মন্ডল গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ভাতৃবধূ গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ঘটনায় অভিযুক্ত কয়লা কারবারির ভাই ও ভাইপোর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। পুলিশের কথায়, তারা ফেরার রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, গত কয়েক দিন ধরে মন্ডল পরিবারে সদস্যদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চলছিলো। সেই কারণেই অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ দু রাউন্ড গুলি চালায়।
শনিবার এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি( সেন্ট্রাল) ডাঃ কুলদীপ এস এস বলেন, পুলিশ একটি সুয়োমোটো মামলা করেছে। বুদ্ধদেব মন্ডল ও তার ছেলে প্রদীপ মন্ডলের নামে এফআইআর করা হয়েছে। কি কারণে এই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তবে, বাড়ির মধ্যে গুলি চললো, তাতে মহিলা জখম হলেও, মন্ডল পরিবারের সদস্যরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এমনকি গুলিবিদ্ধ চৈতালি মন্ডলের স্বামী সুখময় মন্ডলও কিছু বলেননি, বা পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। এখানেই রহস্য দানা বেঁধেছে।
এদিকে, এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ মন্ডলের সোশাল মিডিয়ায় একাউন্টে ছবি রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রদীপ মন্ডল পিস্তলের মতো কিছু একটা হাতে নিয়ে বিভিন্ন ছবির পোজ দিচ্ছে। একটা ভিডিও রয়েছে তার একাউন্টে। এছাড়াও বাবা বুদ্ধদেব মন্ডলের সঙ্গে একটি গাড়ির ছবি রয়েছে সেই সোশাল মিডিয়ায়
উল্লেখ্য, আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক উল্টো দিকে সেনরেলের “এ ‘ ব্লকে কয়লা কারবারি জয়দেব মন্ডলের বাড়ি । ১০/১২ ফুটের রাস্তার একদিকে পুলিশ ফাঁড়ি ও অন্যদিকে জয়দেব মন্ডলের বাড়ি। এমন একটা জায়গায় দিনেদুপুরে বাড়ির মধ্যে গুলি চলার ঘটনা অন্য মাত্রা অবশ্যই পেয়েছে। ঘটনার পরে চৈতালি মন্ডলকে আসানসোলের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়েছিলো। দুটি গুলির মধ্যে একটি ঐ মহিলার কোমর ও একটি কোমর এবং হাঁটুর মাঝে লাগে বলে বাড়ির মধ্যে ঐ মহিলাকে কে গুলি চালালো, তা অবশ্য সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা যায়নি।
এদিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ চৈতালি মন্ডলকে সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন, ঐ মহিলার শরীরে গুলি লেগেছে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন একটি গুলি কোমরে ও একটি গুলি কোমর ও হাঁটুর মাঝে লেগেছে। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা করে, তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ হাসপাতালে আসেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যায় সাংবাদিকরাও। কিন্তু তারই মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে হাসপাতালের পেছনের গেট দিয়ে গুলিবিদ্ধ চৈতালি মন্ডলকে সংবাদমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে বাড়ির লোকেরা গাড়িতে বার করে নিয়ে চলে যান। বর্তমানে তিনি কোথায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তা জানা যায়নি।
ঘটনা প্রসঙ্গে ঐ হাসপাতালের অপারেশন ম্যানেজার পূরবী তেনেজা শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেছিলেন, চৈতালি মন্ডল নামে এক মহিলাকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার শরীরে দুটি গুলি লেগেছে। আমরা তাকে ভর্তি কথা বলি। কিন্তু বাড়ির লোকেরা তাকে বার করে নিয়ে চলে যান। পুলিশ সেই সময় সেখানে ছিলো। তিনি আরো বলেন, কি করে গুলি লাগে, তা আমাদের জানানো হয় নি।
প্রসঙ্গতঃ, কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সহযোগী হিসেবে বেশ কয়েক মাস আগে জয়দেব মন্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিলো। বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত আছে। পাশাপাশি এই মামলায় ইডি জয়দেব মন্ডলের বাড়িতে তল্লাশি করে বেশ কয়েক কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে।