West Bengal

তৃণমূলের মুখপত্রে মন্ত্রী বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা বন্ধ, সরকারি গাড়ি ফেরত

আগামীকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক,পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের, চেয়ার থাকবে কি না নজর রাজ্যবাসীর

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের (AITC) মুখপত্র জাগো বাংলার সম্পাদক। কিন্তু এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির মামলায় পার্থকে ইডি গ্রেপ্তার করায় জাগো বাংলা সম্পাদককে আর ‘মন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করছে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। সর্বভারতীয় স্তরে কোনও রাজনৈতিক দলে এমন কোনও পদ নেই। এদিক থেকে পার্থের কদর বড়। কিন্তু দলের মুখপত্রেও সাধারণ সম্পাদকের কথা বলা হচ্ছে না। শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখা হচ্ছে। এটা কি একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব পার্থ চ্যাটার্জিকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারে? ২৮ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সবার নজর সেইদিকে রয়েছে।

কিন্তু অন্য মন্ত্রীদের নিয়ে তা করা হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, মঙ্গলবার জাগো বাংলায় ছাপা অরূপ বিশ্বাসের একটি ছবি মন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি যে সংবাদপত্র ছাপা হওয়ার আগে নিয়মিত জাগো বাংলা পর্যালোচনা করেন। অর্থাৎ পার্থের নামের আগে ‘মন্ত্রী’ ও ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদগুলো ছেঁটে ফেলা হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশের মতে, পদক্ষেপটি বোধগম্য। দিদি আনুষ্ঠানিকভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব, অফিস এবং দলীয় পদ (মন্ত্রিসভা এবং টিএমসি কোর কমিটি থেকে বহিষ্কার) গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি না করলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তাকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থায় অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন।

তৃণমূল নেতৃত্বের এই মনোভাব দেখে অনেকেই মনে পড়ছে নটওয়ার সিংয়ের ঘটনা। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নটওয়ার সিং প্রথম ইউপিএ শাসনকালে কেন্দ্রে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নটওয়ার তখন বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। অর্থাৎ মন্ত্রিসভার শীর্ষ চারে ছিলেন তিনি। সেই দুর্নীতি মামলায় মানসিকভাবে আহত হন সোনিয়া গান্ধী। কারণ, তিনি যাকে বাবা হিসেবে সম্মান করেন, তিনি দলকে এতটা অসম্মান করতে পারেন তা ভাবতে পারেননি। কিন্তু সোনিয়া শিকল শক্ত করেছিলেন।

পার্থ সেই কয়েকজন তৃণমূলের (টিএমসি) একজন যাদেরকে মমতা “দাদা” বলে সম্বোধন করেন। ২১শে জুলাই অনুষ্ঠিত সভায়ও ‘পার্থদা’ বলে ভাষণ দেন দিদি। কালীঘাটের এক বিশ্বস্ত নেতার মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে নেতৃত্ব অবগত থাকতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে পার্থ যে এতটা রঙিন তা তার ধারণা ছিল না। এই ঘটনা তাকে আঘাত করেছে। বিজেপির রাজনীতির মোকাবিলা করতে তিনি প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার খুব মন খারাপ।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, স্কুল সার্ভিস দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার রঙিন জীবনযাত্রার স্তরগুলি উন্মোচিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, তৃণমূলের অনেক সমর্থকও আলোচনা শুরু করেছেন। কিন্তু এই পার্থই ছিলেন তৃণমূলের ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান। তবে পার্থকে কবে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে সেটাই এখন দলে কৌতূহলের বিষয়। নবান্নর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আগে থেকেই পার্থ নামে একজন শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। শিল্প দফতরের সঙ্গে তার কোনো কাজ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এটি দেখাশোনা করে। এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র তাঁকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেন।

বাকি সংসদীয় মন্ত্রী পদের দায়িত্ব থেকে যায়। মুখ্যমন্ত্রী পার্থ ছাড়া অন্য কাউকে এই দফতরের দায়িত্ব দেবেন এমনটাও সম্ভব। কারণ, মন্ত্রী জেলে বা পুলিশ হেফাজতে থাকলে চলবে না। বিধানসভায় থাকা উচিত। ২৮ তারিখ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হয়তো সেদিন এ ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। মন্ত্রী হিসেবে পার্থ যে গাড়ি পেতেন, তা আজ বিধানসভায় জমা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এই ঘটনাকে একটি সংকেত হিসেবে দেখছেন। তবে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটি বিধানসভার গাড়ি। সংসদীয় মন্ত্রী হেফাজতে থাকায় গাড়িটি বিধানসভায় আনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *