West Bengal

মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল পার্থ চ্যাটার্জিকে

মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত দপ্তর তাঁর নিজের কাছেই রাখলেন

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : প্রত্যাশা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসএসসি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ওপর কোপ পড়ল। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন সন্ধ্যায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে পার্থের। একইসঙ্গে দলের মুখপত্র ও মহাসচিবের পদও হারাতে হতে পারে তাকে।

পার্থের অধীনে থাকা তিনটি দপ্তর আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে রাজভবনের অনুমোদন অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা রাজ্যপালকে জানিয়েছেন, পার্থকে আর মন্ত্রিত্বে রাখা হচ্ছে না। তিনি তার অধীনস্থ কার্যালয়গুলি দেখভাল করবেন। এরপরই সবুজ সংকেত দেন রাজ্যপাল।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা রাজ্যের। মমতা কি এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ইডি হেফাজতে থাকা পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর বিষয়ে কথা বলবেন? কিন্তু সেই বৈঠকে পার্থকে নিয়ে কিছু বলেননি মমতা। মাত্র ১৫ মিনিটে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালেই রাজভবনকে বিষয়টি জানানো হয়। এভাবেই বিষয়টি এগিয়েছে।

এখন দেখার বিষয়, দল পার্থকে সাসপেন্ড করে কি না, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না। তবে পার্থের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে তৃণমূলে বিশেষ সংশয় নেই। এটি লক্ষণীয় যে যদি কোনও মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা (রাজ্য বা কেন্দ্র) থেকে বরখাস্ত করতে হয় তবে সংশ্লিষ্ট দলকে প্রথমে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় এবং মুখ্যমন্ত্রীকে (কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী) তা জানায়। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহমন্ত্রীদের এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কাছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার জন্য। তবে পার্থের ক্ষেত্রে দলের আনুষ্ঠানিক সুপারিশের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ রাজভবনে পাঠিয়েছিলেন।

গত শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে পার্থের বাড়িতে অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডি একই দিনে বিভিন্ন জেলায় আরও ১৪ টি জায়গায় অভিযান চালায়। কখনও কয়েক ঘন্টা ধরে অনুসন্ধান এবং কখনও আরও দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে বহু কোটি টাকা উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় আচমকা হৈচৈ পড়ে যায়। সেই ছবিই টুইট করে ইডি। একটি সূত্রের ভিত্তিতে পরের দিন পার্থ ও অর্পিতাকে গ্রেফতার করা হয়। ছয় দিন পর পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।

পার্থকে গ্রেফতারের দিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হয়, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল। দুদিন পর বঙ্গ সম্মান অনুষ্ঠানে মমতা নিজেই প্রায় একই কথা বলেন। মমতা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তখন ব্যাখ্যা করেন যে পার্থকে ‘আপাতত’ দলীয় পদ বা মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না।

তবে বিরোধীরা পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন তারা। এমনকি তৃণমূলের মধ্যেও পার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মতামত দেননি। প্রসঙ্গত, বুধবার আরেকটি ইডির পক্ষ থেকে
অত্যন্ত নাটকীয় অভিযান চালানো হয়। অর্পিতার বেলঘরিয়া ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। সঙ্গে ৪ কোটি টাকারও বেশি সোনা, অনেক সম্পত্তির দলিল ও কাগজপত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *