West Bengal

নজীরবিহীন ! হাইকোর্টের নির্দেশে দাবিদারহীন আইনজীবী কৌশিক দের দেহ সৎকারে এগিয়ে এল হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়: এক কথায় নজীরবিহীন! কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী প্রয়াত কৌশিক দে’র দেহ সৎকারের ভার কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদককে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। এই সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় প্রধান বিচারপতি রাজ্য প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বার অ্যাসোসিয়েশনের দুই কর্তার হাতে দেহ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ফাইল চিত্র

গত বৃহস্পতিবার আইনজীবী কৌশিক দের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে মর্মাহত হয়ে পড়েন সহকর্মীরা। আইনজীবী কৌশিক দে একাই একটি আবাসনে থাকতেন। পরিবারে তাঁর কেউ ছিল না। যে কারণে তাঁর দেহের কোন দাবিদার ছিল না। এবার আদালতের নির্দেশে তাঁর সৎকার করবে বার অ্যাসোসিয়েশন। গত শনিবার মৃত আইনজীবীর সহকর্মী মানবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে জনস্বার্থের মামলা ( ডব্লিউ পি এ( পি) ৩৫৪/২০২২) দায়ের করে দেহ সৎকারের অধিকার তাঁকে দেওয়ার আর্জি জানান। জনস্বার্থের মামলায়
মামলাকারীর পক্ষে ছিলেন বিশ্বব্রত বসু মল্লিক ও দীপায়ন কুন্ডু। এছাড়া সঙ্গে ছিলেন কল্যান কুমার চক্রবর্তী সহ আরো বেশ কিছু আইনজীবী। সহকর্মীরা অনেকে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নেন।সোমবার প্রধান বিচারপতি বার অ্যাসোসিয়েশনকে ভার দেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে হরিদেবপুর কালীতলার বাড়িতে উদ্ধার হয় আইনজীবী কৌশিক দে’র মৃতদেহ। কিন্তু তাঁর কোনও আত্মীয় পরিজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় আইনজীবীর দেহ। তিনি একাই থাকতেন ওই বাড়িতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের বাড়ি হরিদেবপুর থানা এলাকার কালিতলা এলাকায়। সেখানকার একটি আবাসনে একাই থাকতেন তিনি। পরিবারে তার কেউ ছিল না। বছর আগে তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল তার। তা সত্বেও তিনি নিয়মিত হাইকোর্টে আসতেন। কিন্তু গত দশ দিন হাইকোর্টে আসেননি তিনি। তাকে ফোনেও পাননি সহকর্মীরা। এরপরই তার খোঁজ নিতে আবাসনে যান কয়েক জন আইনজীবী। সেখানে দেখা যায়, ঘরের ভিতর থেকে দরজা বন্ধ রয়েছে। পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পড়শীরা জানাচ্ছেন, দিন পাঁচেক আগে তাকে পাড়ার খেলার মাঠে শেষ বার দেখা গিয়েছিল। তারপর তাকে আর দেখা যায়নি। পুলিশের অনুমান, তিন চার দিন আগে মৃত্যু হয় তার।


ময়নাতদন্তের পর তাঁর দেহের কোন দাবিদার না থাকায়, এতদিন মর্গেই পড়ে ছিল তাঁর দেহ।পুলিশ দেহের ময়নাতদন্তে হত্যা বা আত্মহত্যার কোনও প্রমাণ পায়নি। মনে করা হচ্ছে, ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান।
বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৌশিক দের দেহ সৎকার করবে হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্যান কুমার চক্রবর্তীকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জুনিয়র ছিল কৌশিক। যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতো সিনিয়রদের। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল। খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল অনেকটাই। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা এত তরতাজা যুবকের এভাবে ছেড়ে ছিলে যাওয়া।মৃত আইনজীবী কৌশিক দের কোন আত্মীয় নেই। তাই, কেউ তাঁর দেহের দাবি করেন নি। হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কল্লোল মণ্ডল ও সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মল্লিকের হাতে তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হবে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদকের কাছে তাঁর ডেট সার্টিফিকেট জমা থাকবে।” এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী মহলের বক্তব্য, এমন ঘটনার নজির তাঁরা কেউ মনে করতে পারছেন না। এটা একটা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *