হিরাপুর থানায় হামলা চালানোর অভিযোগ, ধৃত ১০
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ শ্বশুরবাড়ি থেকে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর দেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় মৃতার বাপেরবাড়ির তরফে স্বামী সহ চারজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো। কিন্তু একদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় আচমকাই থানায় চড়াও হয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠলো বাপেরবাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে ইস্পাত নগরী বার্ণপুরের আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের হিরাপুর থানায়। প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল এলাকায় থানায় এইভাবে চড়াও হয়ে হামলা চালানোর ঘটনায় বার্ণপুর শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় হিরাপুর থানার পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ মোট ৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সৌমেন কুন্ডু নামে এক সাব ইন্সপেক্টর বা এসআই ও দুই মহিলা সিভিক ভলেন্টিয়ারকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হিরাপুর থানার পুলিশ এই ঘটনায় মৃত গৃহবধূর বাবা ও মা সহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতার স্বামী সহ দুজনকে ধরেছে বলে এদিন হিরাপুর থানা সূত্রে জানা গেছে।
গত রবিবার বিকেলে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের ৮ নং বস্তির গ্রিনভ্যালি এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রিয়া মাজি ( ২৩) নামে এক গৃহবধূকে ঝুলন্ত অবস্থায়
পাওয়া গেছিলো। স্বামী হিমাংশু মাজি তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাঁকুড়ার শালতোড়ের বাসিন্দা প্রিয়ার ৪ বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের সময় বাপের বাড়ি থেকে পন হিসাবে নগদ ২ লক্ষ টাকা, ৮ ভরি সোনার গয়না সহ অন্যান্য জিনিস দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ের মাস কয়েক পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকেরা বাপের বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস আনার জন্য প্রিয়ার উপর অত্যাচার করতো বলে বাপের বাড়ির অভিযোগ। মাঝে আলমারি সহ বেশকিছু জিনিসও দাবি মতো দেওয়া হয়। মেয়ের মৃত্যুর খবর রবিবার রাতেই প্রিয়ার বাপেরবাড়ির লোকেরা আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন। সোমবার ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে।
সোমবারই মৃতার বাপেরবাড়ির তরফে পনের জন্য অত্যাচার চালিয়ে প্রিয়াকে গলা টিপে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের নামে হিরাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তাদের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে এগারোটার পরে জনা ৩৫ লোক হিরাপুর থানায় চলে আসে। তাদের মধ্যে মৃত গৃহবধূর বাবা, মা সহ অনেকেই ছিলেন। কেন এখন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, তা জানতে চান তারা। সেই সময় থানায় কর্মরত পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এই বলে যে, ওসি নেই। তিনি আসছেন। তার সঙ্গে কথা বলবেন।
সেই সময় আচমকাই তারা থানায় হামলা চালায়। বলতে গেলে সব পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের মারতে শুরু করে তারা। মহিলারাও তার থেকে বাদ যায়নি। পাশাপাশি থানার টেবিল ও চেয়ার ভাঙা হয়। মাটিতে ফেলে নষ্ট করা হয় জরুরি কাগজপত্রও। এই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি থানায় ছুটে আসেন ওসি ও সিআই। তারা কোনমতে পরিস্থিতি সামাল দেন ও হামলাকারী ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়।
আক্রান্ত পুলিশ কর্মীরা বলেন, আমরা বুঝতেই পারিনি। কথা বলতে বলতে আচমকাই চড়াও হয় ঐ লোকেরা। মহিলা পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের চুল টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তারা আরো বলেন, আমরা ওদের বড়বাবুর সঙ্গে কথা বলার জন্যেও বলি।
এদিকে, হিরাপুর থানার পুলিশ জানায়, গৃহবধূর স্বামী সহ দুজনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে চারজনই পালিয়ে ছিলো। তাদের খোঁজ করা হচ্ছিলো।