ASANSOL

নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণে দোষী সৎ বাবার ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ( Asansol Live News Today ) ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সৎ বাবার ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হলো। শনিবার এই সাজা ঘোষণা করেন আসানসোল আদালতে অতিরিক্ত জেলা জজ বা এডিজে ( দ্বিতীয়) শরণ্যা সেন প্রসাদ। দুবছরেরও বেশি সময় ধরে আসানসোল আদালতে চলা এই মামলার শুনানি শেষে গত ১৬ আগষ্ট মিঠুন চিত্রকর নামে ঐ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন আসানসোল আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ বা এডিজে ( দ্বিতীয়) শরণ্যা সেন প্রসাদ। শনিবার দোষী সাব্যস্তর বিরুদ্ধে বিচারক সাজা ঘোষণা করছেন বলে জানান এই মামলার সরকারি আইনজীবী তাপস উকিল।


তিনি বলেন, সাজা ঘোষণার নির্দেশে মিঠুন চিত্রকরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার কথা বলেছেন অতিরিক্ত জেলা জজ। সেই জরিমানা অনাদায়ে সাজার মেয়াদ আরো তিনমাস বাড়বে। এছাড়াও বিচারক নাবালিকাকে ভিকটিমস্ রিলিফ ফান্ড থেকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেন। মামলা চলার মধ্যে আগেই বিচারকের নির্দেশ মতো নাবালিকা এই ফান্ড থেকে ১ লক্ষ টাকা পেয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, আসানসোলের জামুড়িয়া থানার নতুন জামশোলের বাসিন্দা মিঠুন চিত্রকর এই মামলা চলাকালীন জামিন পায়নি। সে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারেই রয়েছে। জেলে থাকাকালীন বা কাস্টোডিয়াল ট্রায়াল হলো বলে এই মামলা সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন ।এই মামলায় নাবালিকার গোপন জবানবন্দি নেওয়া ছাড়াও মোট ৯ জন সাক্ষ্য দেন।


জানা গেছে, আসানসোলের জামুড়িয়া থানার নতুন জামশোলের বাসিন্দা কান্তি বাউরি ওরফে মধুমিতা বাউরির দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী হলো মিঠুন চিত্রকর। ১৪ বছরের নাবালিকা কান্তি বাউরির প্রথম পক্ষের মেয়ে। ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি জামুড়িয়া থানায় দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী মিঠুন চিত্রকরের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি বলেন, আমার ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়েকে স্বামী মিঠুন চিত্রকর লাগাতার ধর্ষণ করেছে। বর্তমানে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। মেয়ের পেট ব্যথা হওয়ায় তাকে আমি এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। ঐ চিকিৎসক পরীক্ষা করে আমায় বলেন, মেয়ের এই শারীরিক অবস্থা। তখন মেয়েকে জিজ্ঞাসা করায় সে আমাকে সৎ বাবার তার উপর শারীরিক অত্যাচারের কথা বলেছে। মেয়ে বলেছে, আমি না থাকার সুযোগে বাড়িতে ও অন্য সময় বাইরে নিয়ে গিয়ে এই অত্যাচার করতো। এই সবকিছু কাউকে না বলার জন্য হুমকি দিতো। কান্তি বাউরির এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মিঠুনকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৬ ও পকসো আইনের ৪ ও ৬ নং ধারায় মামলা করা হয়। পুলিশ পরে নাবালিকার বয়ান নথিভুক্ত করে ও তার শারীরিক পরীক্ষা করায়।


পাশাপাশি, কান্তি বাউরি মেয়ের বয়সের কথা ভেবে আসানসোল আদালতে গর্ভপাত করানোর জন্য আসানসোল আদালতে একটি আবেদন করেন। তার ভিত্তিতে বিচারক ঐ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি গোটা বিষয়টি দেখার জন্য সিডবলুসিকে দায়িত্ব দেয়। এরপর সিডবলুসি আদালতের নির্দেশ মতো আসানসোল জেলা হাসপাতাল কতৃপক্ষের যোগাযোগ করে আইন মতো নাবালিকার গর্ভপাত করায়। গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে সিডবলুসি একটি রিপোর্টও আদালতে জমা দেয়।
এদিন এই মামলার সরকারি আইনজীবী তাপস উকিল বলেন, সব তথ্য প্রমান ও ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেন শেষে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে সবকিছুই প্রমাণিত হয়েছে। এদিন এডিজে ( দ্বিতীয়) শরণ্যা সেন প্রসাদ এই মামলায় পুলিশের দেওয়া ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া মিঠুন চিত্রকরের সাজা ঘোষণা করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *