ASANSOL

তদন্ত চলছে, সিবিআইয়ের দাবিতে, আবারও ৮ ইসিএল কর্তার জামিন নাকচ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় তদন্ত এখনো চলছে। বিভিন্ন জনকে জেরা করা হচ্ছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মঙ্গলবার, এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দাবিতে শেষ পর্যন্ত ধৃত ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম বা জেনারেল ম্যানেজার সহ আটজনের আবারও জামিন নাকচ হলো আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। যদিও, অভিযুক্তদের একাধিক আইনজীবী, তাদেরকে যে কোন শর্তে, এমনকি, গৃহবন্দী বা নজরবন্দী করে রেখে জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এদিন ঘন্টা খানেকেরও বেশি সময় দু’পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৮ জনের জামিন নাকচ করেন। তিনি তাদেরকে আরো ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শারদোৎসব শুরুর ঠিক আগে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে বিচারক জানিয়েছেন। সেদিন এই ৮ জনকে আবার আসানসোল জেল থেকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে।


উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ধৃতদের হেফাজতের মেয়াদ ৬১ দিন পার করলো। পরবর্তী শুনানির দিন অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের হেফাজতে থাকার মেয়াদ বেড়ে ৭৫ দিন পার করবে। এর আগে গত ৩০ আগষ্ট এই ৮ জনকে আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয়েছিলো।
এদিন আশীষ মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, আশীষ কুমার, জগদীন্দ্র গাঙ্গুলি, অঙ্কিতা সেনগুপ্ত সহ অন্যান্য আইনজীবীরা এই ৮ জনের হয়ে সওয়াল করেন। তারা বলেন, এই মামলায় গত ১৯ জুলাই সিবিআই ৪১ জনের নাম সহ প্রথম বা যে সাপ্লিমেন্টারী চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে আটজনের নাম আছে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জও গঠন হয়েছে। তাহলে তাদের আর নতুন করে জেলে রাখা ও জিজ্ঞাসাবাদের কি প্রয়োজন আছে? আর এতদিন দিন জেল হেফাজতে থাকাকালীন এই মামলার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী অফিসার তাদেরকে জেরা করে কি পেয়েছেন, তাও জানাননি।


সিবিআইয়ের তরফে এদিন এজলাসে আইনজীবী রাকেশ কুমার এই আটজনের জামিন দেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করেন। এদিনও সিবিআইয়ের তরফে জেল হেফাজতে থাকার সময় মামলার তদন্তের জন্য ধৃতদের জেরা করার আবেদন করা হয়েছিলো। বিচারক সেই আবেদনও এদিন মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গতঃ, সিবিআই কয়লা পাচারের এই মামলায় গত ১৩ জুলাই প্রথমে যে সাতজনকে গ্রেফতার করেছিল তারা হলেন ইসিএলের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মল্লিক, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় দাস, বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার এসসি মৈত্র এবং মুকেশ কুমার। এছাড়া রয়েছেন দুই নিরাপত্তা আধিকারিক দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ও রিংকু বেহেরা। পরে সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। তিনি তিনদিনের সিবিআই হেফাজত ছিলেন। বাকি সাতজন পাঁচ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে ছিলেন।


সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করে বলেন, ইসিএলের এই আধিকারিকদের সঙ্গে কয়লা পাচার মামলায় অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিলো। এখানে বৃহত্তর যড়যন্ত্র বা লার্জার কন্সপিরেসি হয়েছে। তাদের মধ্যে মোটা অংকের টাকারও লেনদেন হয়েছিলো। এদেরকে জামিন দেওয়া হলে তারা পালিয়ে যেতে পারেন বা সাক্ষ্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। কেন না তারা প্রভাবশালী। তাই তাদেরকে কোন অবস্থাতেই যেন জামিন দেওয়া না হয়।


যদিও আটজনের আইনজীবীদের মধ্যে সিবিআইয়ের এই দাবি, মানতে চাননি। এজলাসে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ইসিএল কর্তাদের আইনজীবী আশীষ মুখোপাধ্যায় ও আশীষ কুমাররা বলেন, এরা কেউ পালাবেন না। সবাই আসানসোলে থাকেন। তিনজন তো চাকরিও করেন না। বাকিরা চাকরি করলেও, বর্তমানে তারা কর্মস্থল থেকে সাসপেন্ড হয়ে আছেন। তাহলে তারা কি করে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন? তারা যে জায়গায় কাজ করতেন বা যেখানে কয়লা চুরির কথা বলা হচ্ছে, সেটি ইসিএলের। সেই এলাকা ও সেখানকার সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব তো এদের একার নয়। অনেকেই আছেন। তাদেরকে কিন্তু সিবিআই জেরা করেনি বা করছে না। তারা কি বাইরে থেকে তথ্য প্রমান নষ্ট বা প্রভাব খাটাতে পারবে না? সিবিআই শুধু এই ৮ জনকে প্রভাবশালী বলে, জামিন আটকাচ্ছে। তাই তাদেরকে যেকোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৮ জনের জামিনের আবেদন নাকচ করে আরো ১৪ দিনের জেল হেফাজতর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গতঃ, এই কয়লা পাচার মামলায় মুল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালাকে এখনো পর্যন্ত সিবিআই গ্রেফতার করতে পারেনি। সে এখনো সুপ্রিম কোর্টের রক্ষা কবচে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *