অর্কেস্ট্রায় নিয়ে গিয়ে বিহারে যুবতীকে আটকে রাখার অভিযোগ, উদ্ধার করলো রানিগঞ্জ থানার পুলিশ
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জি, রানীগঞ্জ দূর্গাপুজোর সময় ৫ দিনের জন্য অর্কেস্ট্রায় নাচের জন্য পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জের ১৯ বছরের এক যুবতীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিলো। কালিপুজোর একদিন আগে ধনতরাসের রাতে বিহারের সিওয়ান থেকে ঐ যুবতীকে উদ্ধার করলো রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ির পুলিশ। রবিবার দুপুরে উদ্ধারকারী পুলিশের দলের সঙ্গে রানিগঞ্জে এসে পৌঁছেছে রানিগঞ্জের ৬/৭ নং কলোনির বাসিন্দা যুবতী রবীনা কুমারী সিং। এদিনই পুলিশ তার মেডিক্যাল পরীক্ষা করায়।
সোমবার যুবতীকে আসানসোল আদালতে তুলবে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ। তারপর তাকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে আদালতের নির্দেশ মতো।
জানা গেছে, ঐ যুবতীর পাঠানো ভয়েস ম্যাসেজ ও মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাকিং করে পুলিশ তার সন্ধান পায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর রবীনা কুমারী সিং মা সোনামুখি সিং রানিগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন মহালয়ার পরের দিন গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামা কিনতে আসানসোলে যায়। কিন্তু তারপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। দুদিন আগে জানতে পারি যে তাকে কেউ বা কারা কোথাও নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে।
রবীনা আমাকে একটা ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। তাতে সে বলেছে তাকে কেউ একজন অর্কেস্ট্রার দলের সাথে নাচ করার জন্য নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি তিন দিন ধরে তাকে না খেতে দিয়ে বন্ধ ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। সেই মোবাইলের ভয়েস ম্যাসেজ ও মোবাইলে ফোন নম্বর সোনামুখী দেবী রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানান। এরপর রানিগঞ্জ থানার পুলিশ বিষয়টি নিয়ে হয় যে এলাকায় সে গেছে সেখানকার থানায় তাদেরকে যেতে বলে বা মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় লিখিতভাবে অভিযোগ চায়।
রবীনা কুমারী সিং ভয়েস ম্যাসেজ পাঠায়, তাতে সে বলে, যে তাকে বিহারের সিওয়ানে একটি অর্কেস্ট্রা পার্টির সঙ্গে দূর্গা পূজোর সময় নাচার জন্য বারাবনির অনুরাধা নামে একটি মেয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তার প্রথমে তিন দিন ও পরে পাঁচ দিনে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারপরেও তাকে ছাড়া হয়নি। কিন্তু তার মধ্যে অনুরাধা চলে আসে। এমনকি তাকে আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে নাচের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে যেতে না চাওয়ায় তাকে একটি ঘরে তারা বন্দী করে রেখেছে। তাকে খেতে দেওয়া হচ্ছেন না গত তিন দিন ধরে। ঐ ভয়েস ম্যাসেজে যুবতী আশঙ্কা করেছে যদি এভাবে চলতে থাকে তাকে খেতে না দেয় তাহলে হয়তো সে মারা যাবে। তাই সে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানিয়েছে। ঐ মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে পুলিশ জানতে পারে যে বিহারের সিওয়ান রোডের কানপুরা বলে একটি জায়গা । যেখানে থেকে সে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। যদিও যুবতীর পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরাধা বলে যে যুবতীর কথা রবীনা বলেছে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
প্রথমে রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়িতে রবীনার মা মৌখিকভাবে বিষয়টি জানান । পরে তিনি পুলিশ লিখিতভাবে জানালে, সেই নির্দিষ্ট অভিযোগ ভিত্তিতে পুলিশ সার্চ ওয়ারেন্ট বার করে। এরপর মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাকিং করে পুলিশের একটি দল শনিবার বিহারের সিওয়ানে পৌঁছায়। আগাম কোন কিছু সেই এলাকার থানায় অবশ্য এই ব্যাপারে কিছু জানানো হয় নি রানিগঞ্জ থানার পুলিশের তরফে। সেখানে পৌঁছে রানিগঞ্জ থানার পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ির পুলিশের দল যুবতীর ছবি দেখায় ও সমস্ত ঘটনা জানায়। এরপর শনিবার রাতে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ সিওয়ানে সিমরৌলির খামুড়ি থেকে রবীনাকে উদ্ধার করে।