ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

নজির সৃষ্টি জামুড়িয়ার চট্টোপাধ্যায় ও ফৌজদার পরিবারের, সাক্ষী থাকলো আসানসোলের ঘাঘরবুড়ি মন্দির

মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে থেকে বিধবা পুত্রবধূর বিয়ে দিলেন শ্বশুর

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ সাধারণতঃ এমনটা হয়না বললেই চলে। বাড়ির ছেলের অকাল মৃত্যুর পরে বৌমা শ্বশুরবাড়িতে থাকবে? তাও আবার নিজের কন্যা সন্তান নিয়ে? তারপর সেই বিধবা বৌমার পাত্র দেখে বিয়ে দেওয়া? গোটা সমাজে আধুনিকতার ছোঁয়া। এমন ভাবনা ভাবাই যায়না। এ যেন অনেকটা সিনেমার চিত্রনাট্যর মতো শোনালেও, পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়ায় তা বাস্তব হলো। শেষ নভেম্বরের শীতে শুক্রবার সকালে এমনই নজির সৃষ্টি করলো জামুড়িয়ার চিঁচুড়িয়া গ্রামের চট্টোপাধ্যায় ও ফৌজদার পরিবার। আর এমন একটা ঘটনার সাক্ষী থাকলো আসানসোলের কালীপাহাড়ির ২ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া ঘাঘরবুড়ি মন্দির।


এদিন সকালে এই ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে হিন্দু আচার ও রীতি মেনে চার হাত হলো জামুড়িয়ার চিঁচুড়িয়া গ্রামের প্রভাত ফৌজদার ও পুজা চট্টোপাধ্যায়ের। গত ৪ বছর ধরে নিজের মেয়ের মতো রেখে বিধবা বৌমা বা পুত্রবধূ পুজার বিয়ে দিলেন শ্বশুর কিশোর চট্টোপাধ্যায়।
জামুরিয়ার চিঁচুড়িয়ার বাসিন্দা কিশোর চট্টোপাধ্যায় পুত্র বা ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিয়ে হয়েছিল পুজা চট্টোপাধ্যায়ের। পরে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু দুবছর পরে আচমকাই কালো মেঘ নেমে আসে পুজার জীবনে ও চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। কিশোরবাবুর ছেলের সাপে কামড়ে মৃত্যু হয়। তারপর থেকে কিশোরবাবুর বৌমা তার এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন।


এই বিয়ে নিয়ে প্রভাত ফৌজদারের দাদা সুখময় ফৌজদার বলেন, কিশোর চট্টোপাধ্যায় আমার ভাইয়ের মতো। সে একদিন আমার কাছে তার বিধবা বৌমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা তিন ভাই ও পরিবারের সদস্যরা সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবার শিক্ষিত। পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের আদর্শ মেনে চলি আমরা। তিনি তো এটাই চালু করেছিলেন। তার মতো মানুষ কতো দূরদর্শী ছিলেন। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তো এখনো কুসংস্কার মুক্ত নয়। বলতে হলে, আমরা এই সমাজের কাছে একটা বার্তা দিতেই এই কাজটা করলাম। যাতে অন্যরাও এটার অনুকরণ করেন। সুখময়বাবু, এরজন্য চিঁচুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ও সেখানকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানান। বলেন এরা না থাকলে, এত বড়ো কাজ করতে পারতাম না। গ্রামের অন্য মানুষদের সঙ্গে প্রধান এই বিয়ের সাক্ষী থাকতে আসানসোলের মন্দিরে এসেছিলেন।


কিশোর চট্টোপাধ্যায় নিজের বৌমার বিয়ে দিতে পেরে যে খুবই তৃপ্ত, তা তার কথাতেই বোঝা গেলো। তিনি বলেন, বিয়ে দুবছর পরে ছেলের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। বৌমা পুজা চট্টোপাধ্যায়কে তার কন্যা সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে দিইনি। গত চার বছর ধরে বাড়িতে রেখে মেয়ের মতো মানুষ করেছি। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, আমরা আর কতদিন থাকবো। তখন এদের কি হবে। এই ভেবে তার বিয়ে আবার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ফেলি। গ্রামেরই ফৌজদার পরিবারকে গিয়ে বিয়ে প্রস্তাব দিলাম। তারা রাজি হলো। তারপর এদিন ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে প্রভাত ফৌজদারের সঙ্গে পুজার বিয়ে দিলাম।


এই বিয়ের পরে পুজা তেমন কিছু বলতে না চাননি। বলেন, কি আর বলবো? তবে প্রভাত ফৌজদার বলেন, ইন্দ্রজিৎ আমার বন্ধুই ছিলো। ওর বিয়েতে আমিও ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে তার সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। তখন তার একটা কন্যাও ছিলো। পুজার শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার পরিবারের কাছে প্রস্তাব আসে। তারপর এই বিয়ে। সামান্য টুকটাক কাজ করা প্রভাত জানান, দায়িত্ব বাড়লো। অভিভাবক হিসাবে যা দায়িত্ব সব পালন করবো।
এমন একটা বিয়ের পরে অতিথিদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে না? তা কি হতে পারে? ছিলো সবকিছুই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *