বার্ণপুর ইস্কো কারখানায় কর্মরত অবস্থায় ঠিকা কর্মীর মৃত্যু, চাকরি ও ক্ষতি পূরণের দাবিতে বিক্ষোভ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃপশ্চিম বর্ধমান জেলার ডিএসপি বা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পর এবার বার্ণপুর ইস্কো কারখানা বা আইএসপি৷ একটি বেসরকারি সংস্থার এক স্থায়ী ঠিকা কর্মীর মঙ্গলবার রাতে কর্মরত অবস্থায় আচমকা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মৃত কর্মীর নাম সুজয় শিল (৪০)। তার বাড়ি আসানসোল দক্ষিণ থানার মহিশিলা কলোনীর বটতলা বাজার এলাকায়। পরে বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টার বেশি সময় ধরে মৃতদেহ রেখে পরিবারের একজনকে চাকরি ও ক্ষতি পূরণ দেওয়ার দাবিতে অন্য ঠিকা কর্মী, ঠিকা কর্মীদের সংগঠনের সহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিক্ষোভ দেখান। ছিলেন ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অজয় রায় । শেষ পর্যন্ত ইস্কো কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আশ্বাস দেন যে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে ৩০ দিনের মধ্যে তার পরিবারের একজনকে কাজ দেওয়া হবে। পাশাপাশি দেওয়া হবে ক্ষতি পূরণও এরপর দেহটি হিরাপুর থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আইএনটিইউসির ইস্কো ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হরজিত সিং বলেন, মঙ্গলবার সি শিফটে বা নাইট শিফটে রাত বারোটা নাগাদ সুজয় শিল কনভার্টরের ২৬ মিটার উঁচুতে কাজ করছিলেন। সেখানে কোনভাবে গ্যাস লেগে সে অসুস্থ বোধ করে। এরপর সে নিচে এসে রেষ্টরুলে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। তাতেও তার শারীরিক অবস্থা যে ঠিক হচ্ছে না, তা তার সহকর্মীরা দেখে বুঝতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কারখানার ভেতরে স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক সেখানে অক্সিজেন দেওয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে পাঠান। এরপর তাকে ইস্কো হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
এরপরে ঘটনার খবর পেয়ে ঠিকা কর্মী সংগঠনের নেতৃত্ব হাসপাতালে ছুটে আসেন। এরপর মৃতদেহ রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ।
হরজিত সিং সহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দাবি করে বলেন, যেহেতু গ্যাস লেগে কর্মস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে তাই তার পরিবারের একজনকে চাকরি ও নিয়মমাফিক ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। কিন্তু ইস্কো কর্তৃপক্ষ তরফে উপস্থিত আধিকারিকরা বলেন গ্যাসে নয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঐ স্থায়ী ঠিকা কর্মী মারা গেছেন। কর্মীরা বলেন, যে জায়গায় তিনি কাজ করছিলেন সেখানে কার্বন-মনোঅক্সাইড কাজ হচ্ছিল। সেখানে যে মিটারের মাধ্যমে গ্যাসের পরিমাণ বোঝা যায় সেই মিটার, তাদের কাছে ছিল না। থাকলেও ঠিকঠাক কাজ করেও না। কারখানার কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। শেষ পর্যন্ত বুধবার সকাল আটটা নাগাদ কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে রাজি হয় ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পরিবারের একজনকে কাজ দেওয়া হবে। এরপরই দেহ নিয়ে ময়নাতদন্তের জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিন দুপুরে পুলিশ মৃতদেহ কর্মীর স্ত্রী ছবি শীলের হাল হাতে তুলে দেয়।