ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

আসানসোল জেলা আদালতে সাজা ঘোষণা, তৃনমুল নেতা খুনে দোষী সাব্যস্ত সিপিএম কর্মীর যাবজ্জীবন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পশ্চিম বর্ধমানে আসানসোল জেলা আদালত দীর্ঘ ১১ বছর পরে তৃনমুল কংগ্রেসের এক নেতাকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সিপিএম কর্মীর সাজা ঘোষণা হলো।
রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদলের বছর ২০১১ সালে আসানসোলের জামুরিয়ায় শোরগোল ফেলে দিয়েছিলো রবিন কাজি খুনের মামলা। ১১ বছর ধরে মামলা চলার পরে তিনদিন আগেই এই খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন অরবিন্দ বাউরি ওরফে দীনা ( দীনু) বাউরি। বুধবার ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন আসানসোল জেলা আদালতের বিচারক এডিজে (২) শরণ্যা সেন প্রসাদ। তিনি একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারর নির্দেশ দেন। সেই জরিমানা অনাদায়ে সাজার মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়বে বলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই মামলার সরকারি আইনজীবী বা পিপি বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

পিপি আরো বলেন, এই মামলায় মোট আসামী ছিলেন ২৪ জন। যার মধ্যে অন্যতম হলেন জামুড়িয়ার সিপিএমের নেতা মনোজ দত্ত। এই মামলা চলাকালীন ২ জন আসামি মারা যান। প্রমাণের অভাবে ২১ জনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষী দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনাকে অভিযুক্তদের তরফে আদালতে সাধারণ একটা পথ দূর্ঘটনা বলে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। যদিও সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বিচারক মনে করেন, যে এটি খুনের ঘটনা।


পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে ৪ এপ্রিল বেলা বারোটার সময় জামুরিয়া বিধান সভার বাড়ুল গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে যান তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তখন সেখানে সিপিএমের কর্মী অরবিন্দ ওরফে দীনা (দীনু) বাউরির নেতৃত্ব অনেক লোক প্রার্থীর পথ আটকায়। যা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। সেই খবর পেয়ে সেখানে আসেন তৎকালীন ব্লক সভাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যা লঘু সেলের নেতা রবিন কাজি। অভিযোগ সেই সময় লালচাঁদ বাউরি নামে এক সিপিএমের কর্মী রবিন কাজির মাথায় মারে। তাতে রবিন কাজি মাটিতে পড়ে যায়। তখন অরবিন্দ ওরফে দীনা ( দীনু) বাউরি একটি জাইলো চারচাকা গাড়ি তার উপর দিয়ে চালিয়ে পিষে দেয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে আনা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।


এই ঘটনার পরে রবীন কাজির পরিবারের তরফে জামুরিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা করে৷ তদন্তে নেমে পুলিশ অরবিন্দ বাউরি ওরফে দীনা ( দীনু) বাউরিকে গ্রেফতার করেছিল। তার সঙ্গে এই মামলায় আরো ২৩ জন অভিযুক্ত ছিলো। সেই থেকে মামলা চলছিল। দীর্ঘ ১১ বছর পর বুধবার সেই মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে অরবিন্দ বাউরি ওরফে দীনা (দীনু) বাউরিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। এই রায়ে খুশি মৃত রবিন কাজির পরিবারের সদস্যরা। এদিন চূড়ান্ত রায়ের সময় আসানসোল জেলা আদালতে রবিন কাজির স্ত্রী হাজির ছিলেন। যদিও আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠার সময় দীনু বাউরি বলেন, এটা অন্যায় হলো। আর কিছু বলছি না।
এই মামলায় সাজা ঘোষণা নিয়ে সিপিএম নেতা মনোজ দত্ত বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি।

Leave a Reply