ASANSOL

অনিচ্ছাকৃত খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা, ধৃত ৬ জনের ৮ দিনের পুলিশ হেফাজত

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এবার সেই ঘটনায় আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের নামে মামলা দায়ের করলো। জানা গেছে, মৃত তিনজনের মধ্যে অন্যতম আসানসোল উত্তর থানার কাল্লার বাসিন্দা ঝালি দেবী বাউরির ছেলে সুখেন বাউরির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা করা হয়েছে। মামলায় মুল অভিযুক্ত করা হয়েছে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও তার স্ত্রী চৈতালি তেওয়ারিকে। মোট ১০ জনের নামে এফআইআরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও চৈতালি তেওয়ারি ছাড়াও নাম রয়েছে দুই বিজেপি কাউন্সিলর অমিত তুলসিয়ান ও গৌরব গুপ্ত। জানা গেছে, বেশ কয়েকজনকে আটক করে জেরা করার পরে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের নাম হলো সৌরভ কুশওয়ারা, সঞ্জয় যাদব, বিশু রজক, বিনয় তেওয়ারি, রামবাবু সিং ওরফে বান্টি ও পিন্টু শর্মা ওরফে চিন্টু। এরমধ্যে বিনয়, রামবাবু ও পিন্টুর নাম এফআইআরে আছে। বাকি তিনজনের নাম এফআইআরে নেই। ধৃতদের মধ্যে সঞ্জয়ের বাড়ি পান্ডবেশ্বরে। বাকি ৫ জনের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙাল ও তার আশপাশের এলাকায়। ধৃত বিশু রজক এলাকার ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী।


শুক্রবার দুপুরে এই তিনজনকে আসানসোল জেলা আদালতে তুলে আরো তদন্তের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে চায়। পুলিশ বাকিদের গ্রেফতার করতে ও এই ঘটনার রিকনস্ট্রাকশন বা পুনর্নির্মাণ করতে এই তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন আদালতে করে। এদিন আধ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সওয়াল-জবাব শেষে ভারপ্রাপ্ত এসসিজেএম অর্পিত ভট্টাচার্য ধৃতদের জামিন নাকচ করে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অনিচ্ছাকৃত খুন, খুনের চেষ্টা সহ ভারতীয় দন্ডবিধির মোট তিনটি ধারায় মামলা করা হয়েছে।


এদিন দুপুরের পরে আসানসোল জেলা আদালতের এসসিজেএমের এজলাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। ধৃতদের হয়ে এই এজলাসে সওয়াল করেন আইনজীবী শেখর কুন্ডু। পিপি বা সরকারি আইনজীবী হিসাবে ছিলেন প্রীতি মন্ডল। প্রথমেই বিচারক অর্পিত ভট্টাচার্য এই মামলার আইও বা তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান, তার কি বলার আছে। তখন তিনি বলেন, ধৃতদেরকে ১০ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কারণ এই ঘটনার রিকনস্ট্রাকশন করতে হবে ও বয়ান মিলিয়ে দেখতে হবে। এরপর আইনজীবী শেখর কুন্ডু সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে। পুলিশই বলছে, পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনকে কেউ আঘাত করে মারেনি। যে সব ধারায় মামলা করা হয়েছে, তাতে পুলিশ হেফাজত মাত্র ২ দিন হতে পারে। জবাবে পিপি বলেন, এখানে উদ্যোক্তাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করাটা জরুরি। গোটা ঘটনাটি রিকনস্ট্রাকশন করতে হবে। এর জবাবে আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, গাফিলতির হয়ে থাকলে, তা পুলিশেরও আছে।


পুলিশের এই মামলা করা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তিনি বলেন, তৃনমুল কংগ্রেসের কথায় পুলিশ এই মামলা করেছে। আমরা কি কাজ করতে গেছিলাম তা ঐ এলাকার বাসিন্দারা জানেন। আমার স্ত্রী তো ঐ অনুষ্ঠানের জন্য আসানসোল উত্তর থানার পুলিশকে গত ৩ ডিসেম্বর লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। তখন পুলিশ কেন বলেনি, অনুষ্ঠান করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এর মোকাবিলা আইনের পথেই করা হবে। তার মতে, রাজনৈতিক ভাবে আমার ও বিজেপির সঙ্গে পেরে উঠতে না পারায় এইসব করছে। বেছে বেছে বিজেপির নেতা ও কর্মীদের বাড়ি থেকে তোলা হচ্ছে।


এদিন সকালে যখন ধৃতদের আসানসোল জেলা আদালতে আনা হয়, তখন সেখানে দলের নেতা ও কর্মীদের নিয়ে হাজির ছিলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। গাড়ি থেকে ধৃতদের নামার সময় তারা “হর হর মহাদেব ” স্লোগান দিতে থাকেন। একইসঙ্গে বিজেপির নেতা ও কর্মীরা স্লোগান দেন। স্বাভাবিক ভাবেই আদালত চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে আদালত চত্বরে কোন গন্ডগোল না হয়, তারজন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *