অবৈধ হকারি আটকাতে আরপিএফের অভিযান, প্রতিবাদে আসানসোল স্টেশনে ঘেরাও বিক্ষোভ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ অবৈধ হকারদের আসানসোল স্টেশনে প্রায় দিনই রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ ধরে জরিমানা করছে। আর সেই জরিমানা দিতে না পারলে হকারদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।
অথচ পূর্ব রেলের অন্যান্য স্টেশনে হকাররা অবাধে হকারি করছে। আর এই অভিযোগকে সামনে রেখে মঙ্গলবার আসানসোল রেল স্টেশনের ৫ নম্বর প্লাটফর্মে আরপিএফ আউট পোষ্টের সামনে কয়েকশো হকার প্রতিবাদে সরব হন। তারা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে স্টেশনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আরপিএফদের নিয়ে আসা হয়। এদিনের আন্দোলন থেকে হকাররা দাবি করেন, আরপিএফের অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। তা না হলে তারা এরপরে রেললাইনের শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাবেন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেবেন।
তারা বলেন, কয়েকদিন আগেই একজন হকারকে আরপিএফ প্লাটফর্মে তাড়া করে। তাতে সে পড়ে যায় ও গুরুতর আহত হয়। তার উপর তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছিল বলে অভিযোগ । এছাড়াও প্রায় দিনই কোন না কোন হকারকে আরপিএফ ধরে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা করছে। তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জরিমানা না দিলে সেই হকারকে জেলে পাঠানো হচ্ছে। বাজেয়াপ্ত করা জিনিসগুলো আর ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির নেতা রাজু আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে কয়েকশো হকার এই বিক্ষোভ দেখান। রাজু আলুওয়ালিয়া উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি বর্ধমান, মধুপুর , জসিডি , ধানবাদ স্টেশনে হকাররা হকারি করে বছরের পর বছর জীবন ধারণ করতে পারেন, তাহলে আসানসোলে কেন তা হবে না? হকাররা কেন এখানে হকারি করতে পারবে না?
শেখ আকবর ও রাজু সাউ নামে দুই হকার অভিযোগ করে বলেন, এমন দিন নেই যেদিন কোন না কোন হকারকে আরপিএফ ধরছে না। আর ধরলেই প্রায় ১১০০ টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছেন না তাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের দাবি থেকে রেল টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রেশন আসানসোলে হকারি করার অনুমতি দিক।
আসানসোলে এই মুহূর্তে প্রায় ৭০০র মতো হকার আছেন যারা নানান ধরনের জিনিস প্লাটফর্মে বা ট্রেনে হকারি করেন। এদিন প্রায় ঘন্টা দুয়েক ধরে ঘেরাও বিক্ষোভ চলে।
রেল হকাররা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন আগামী দিনে যদি আরপিএফ তাদের নীতি না বদলায় ও অন্য স্টেশনে যা হচ্ছে সেই সুযোগ যদি এখানকার হকারদের দেওয়া না হয়, তাহলে তারা আসানসোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেল লাইনের উপরে শুয়ে সারাদিন ধরে বিক্ষোভ করবে। রাজু আলুওয়ালিয়া আরো বলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চান না। কিন্তু দিল্লির বিজেপির সরকারের নির্দেশে এখানে আরপিএফ আধিকারিকরা এইসব করছেন। এই বাংলায় আমরা এটা হতে দেব না ।
অন্যদিকে, আরপিএফের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার রাহুল রাজ পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, গত এক বছরে মোট ২৭৯৪ জনকে অবৈধ হকারকে আইন ভাঙার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করা হয়েছে । তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রেলের যে আইন আছে হকারদের ক্ষেত্রেও, সেই আইন মেনেই আরপিএফ কাজ করে থাকে।