আসানসোলে বেসরকারি হাসপাতালে এ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করাতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু
চিকিৎসায় গাফিলতিতে সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* একটি বেসরকারি হাসপাতালে ” এ্যাপেন্ডিসাইটিস ” অপারেশন করাতে গিয়ে মৃত্যু হলো এক যুবকের। আর এই ঘটনায় আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক সার্জেন ডাঃ আসিফ আহমেদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন পরিবার। আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের ধ্রুপডাঙ্গার মুঙ্গেরিয়া পাড়ার বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম সনত দাস (৩৫)। মৃত যুবকের স্ত্রী পাপিয়া দাস এদিন দুপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ আপাততঃ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ( ইডি) মামলা করে বৃহস্পতিবার বিকেলে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। তার আগে এদিন সকালে মৃত যুবকের স্ত্রী, মা, পরিবারের অন্য সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা আসানসোল শহরের জিটি রোডের ভগৎ সিং মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। যা নিয়ে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডু বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে আসেন। বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এরপর পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটকের দ্বারস্থ হন। মন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রী তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এরপরই মৃত যুবকের স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর কারণ জানতে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করানোর জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি তিনি গোটা ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
এই ঘটনা নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান বলেন, আমাকে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। তবে শুনেছি এমন একটা ঘটনা ঘটেছে ও তা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসকের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। পাশা পাশি ঐ বেসরকারি হাসপাতালের তরফে কেউ কোন মন্তব্য করেননি।
জানা গেছে, বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত বার্ণপুরের বাসিন্দা সনত দাস দিন কয়েক আগে পেটের ব্যথা নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালের আউটডোরে আসেন। বিভিন্ন পরীক্ষার পরে জেলা হাসপাতালের সার্জেন ডাঃ আসিফ আহমেদ বলেন, এ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে। অপারেশন করাতে হবে। যুবকের পরিবার চিকিৎসককে জানান, তারা মাইক্রো সার্জারী করাতে চান। অভিযোগ, তখন চিকিৎসক তাদেরকে বলেন, জেলা হাসপাতালে তা হয়না। তাদের যদি স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকে, তাহলে তিনি বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে তা করতে পারেন। সেইমতো সনত দাস জিটি রোডের ভগৎ সিং মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার সকালে তার সেখানে অপারেশন শুরু হয়। কিন্তু তার মিনিট পনেরো পরে জানানো হয়, যুবকের শারীরিক অবস্থা ঠিক নেই। এরপর সকাল দশটার পরে ডাঃ আসিফ আহমেদের আন্ডারে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে বলেন, রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটজনক। শেষ পর্যন্ত পরিবারের লিখিত সম্মতিতে মঙ্গলবার সকালে জেলা হাসপাতালে যুবকের আরো একবার অপারেশন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুধবার সন্ধ্যে ছটার পরে জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে তার মৃত্যু। এরপরই তার পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হন। তারা বুধবার রাতেই ঐ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তারা একইসাথে ঐ বেসরকারি হাসপাতালে আসেন। কিন্তু কতৃপক্ষ তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাননি বলে পরিবারের দাবি।
মৃত যুবকের স্ত্রী পাপিয়া দাস ও মা সুন্দরী দাস বলেন, আমাদের পরিবারের এখন কি হবে? ঐ চিকিৎসক কি অপারেশন করেছেন তা আমরা জানতে চাই। পাশাপাশি তার যে গাফিলতি হয়েছে, তাতে তার শাস্তি চাই।
অন্যদিকে, জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, ঐ যুবককে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার করে এখানে আনা হয়েছিলো। প্রথম থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তবুও তাকে চিকিৎসকেরা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। নিয়ম মতো গোটা বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হবে।
তবে, সাধারণ এ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করাতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু হওয়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই ঐ বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ও জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।