আসানসোলে কোটি-কোটি টাকার গাড়ি খোলা আকাশের নীচে পড়ে হচ্ছে নষ্ট
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল, ১৩ জানুয়ারিঃ আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির আমলে কোটি কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি ও ট্রিপলার আসানসোল পুরনিগমের আনা হয়েছিলো। কিন্তু চার বছরের বেশি হতে চললেও, তার মধ্যে অন্ততঃ ৪০ টি গাড়ির কোন রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত করা হয়নি। পুরবাসীদের পরিসেবা দেওয়ার জন্য সেই গাড়িগুলো রাস্তায় চালানো হয়নি । ফলে এই গাড়িগুলো এখন আসানসোল পুরনিগমের স্টোরে খোলা আকাশের নীচে পড়ে পড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হচ্ছে । অন্যদিকে বেশ কিছু সংখ্যায় ট্রিপলার চালকের অভাবে চালানো যাচ্ছে না। ” ক্লিন আসানসোল গ্রীন আসানসোল” প্রকল্পের জন্য এগুলি আনা হয়েছিল।




গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি নিজেই আগে টুইট করে জানিয়েছিলাম ,” ক্লিন আসানসোল গ্রীন আসানসোল” প্রকল্প, যা আমি শুরু করেছিলাম তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শহরে আবর্জনা বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকছে। শুধু তাই নয় আসানসোল পুরনিগমে করোনা মহামারির সময় আনা দুটি অ্যাম্বুলেন্সও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছ। বলা হচ্ছে চালক নেই বলে গাড়ি বা এ্যাম্বুলেন্স গুলো চালানো যায়নি।
তিনি এদিন এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যারা আসানসোল পুরনিগমের পদাধিকারীদের গাড়ি বা অন্যান্য যে সরকারি গাড়ি আছে সেগুলি যদি চালানো যায় তাহলে এই গাড়িগুলোর জন্য চালক নিয়োগ করে চালানো যাচ্ছে না। আসল কথা হলো এই গাড়িগুলো আমার সময় আনা হয়েছিলো, তাই চালানো হচ্ছে না। তার সময় আনা হলেও সেগুলো কেন চালানো হয়নি? তার উত্তরে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, আমি আমার সময় পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে এই কাজ শুরু করে এসেছিলাম।
জানা গেছে, ১১০ টি ট্রিপলার ১১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল। এছাড়াও স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা সুডা থেকে ৪৪ টি নতুন গাড়ি দিয়েছিল। নতুন এই গাড়িগুলি ওয়ার্ডের গলিতে গলিতে গিয়ে আবর্জনা তোলার জন্য আসানসোল পুরনিগমকে দেওয়া হয়। এইসব গাড়িগুলির বেশিরভাগ আসানসোলের জিটি রোডের ঊষাগ্রামের পুরনিগমের সাফাই দপ্তরের যে সেন্ট্রাল স্টোর আছে সেখানে রাখা আছে। কিছু গাড়ি জামুরিয়া ও বকবাঁধিতে রয়েছে।
জিতেন্দ্র তেওয়ারির এই অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক বলেন, এইসব গাড়ি জিতেন্দ্র তেওয়ারি মেয়র থাকাকালীন বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছিলেন বা গাড়িগুলো আনা হয়েছিল। কেন এইগুলো ব্যবহার করা যায়নি, এর জবাব তো ওনার দেওয়া উচিত। আসল কথা হলো পরিকল্পনা বিহীনভাবেই উনি এগুলো কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এত ঐসব গাড়ি চালাতে যত চালকের দরকার সেই চালক নেই। উনি তো মেয়র থাকাকালীন প্রায় বারোশো কর্মী নিয়োগ করেছিলেন । কিন্তু চালক হিসেবে তিনি যদি পরিকল্পনা মাফিক নিয়োগ করতেন তাহলে চালকের অভাব দেখা দিত না। ফলে গাড়িগুলো বিভিন্ন জায়গায় এভাবে পড়ে থাকত না। তবু আমরা প্রায় ৬০% ট্রিপলার বা গাড়ি ব্যবহার করছি।
আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, করোনার পর থেকে মানুষের আর্থিক সংকট বাড়ায় আমরা পুরকর সেভাবে সংগ্রহ এখনো করতে পারিনি। ফলে কিছুটা হলেও আর্থিক সংকট আছে পুরনিগমে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও সময়মতো তাদের যে অর্থ দেওয়ার কথা সেগুলো দিচ্ছে না। চালক নিয়োগ করার ক্ষমতা পুরনিগমের নেই। তবে শববাহী গাড়িটি আমরা চালাতে পারলেও বড় অ্যাম্বুলেন্স দুটি চালাতে পারছি না চালকের অভাবে। একটি অ্যাম্বুলেন্স পুরনিগম রামকৃষ্ণ মিশনকে দিয়ে চালানো যায় কিনা তার জন্য আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, জিতেন্দ্র তেওয়ারি অহেতুক বিতর্ক করে খবরে থাকার চেষ্টা করছেন।