ASANSOL

দূষ্কৃতিদের লাগানো আগুনে পুড়ে ছাই ৩ হেক্টর জমির প্রায় ৪ হাজার গাছ, থানায় অভিযোগ বন দপ্তরের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আবারও জঙ্গলে পুড়ে ছাই হলো প্রায় চার হাজার গাছ। সেই গাছগুলোর বয়স হয়েছিল মাত্র ১৮ মাস থেকে ২৪ মাস। ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের বারাবনি থানার গৌরান্ডী বিটের হোসেনপুর গ্রামের পাশে বন দপ্তরের তৈরি করা সোনাঝুড়ির জঙ্গলে। সেখানে ৩ হেক্টর জমিতে ২০২১ সালে বন দপ্তরের কর্মীরা নিজেরা এই গাছগুলিকে লাগিয়েছিল। আস্তে আস্তে জঙ্গলের আকার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় দু বছর ধরে দিন রাত এক করে শীত বা গ্রীষ্ম তোয়াক্কা না করে জঙ্গলে বন দপ্তরের কর্মীরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছিলেন। তাদের যত্নে গাছগুলো সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু সোমবার দুপুর ১২ টা নাগাদ হঠাৎ দুষ্কৃতিদের লাগানো আগুনে গাছগুলি পুড়ে যায়। সেই আগুনের সঙ্গে পুড়ে মারা যায় জঙ্গলে গাছের মধ্যে থাকা কীটপতঙ্গরাও। রেঞ্জ অফিসার বলেন, বন দপ্তরের কর্মীরা দেখতে পান হঠাৎই জঙ্গলে আগুন লেগেছে । হাওয়ার গতি অনেকটাই বেশি থাকায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তর আগুন ছড়িয়ে যায়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে জঙ্গল ধ্বংস হয়ে যায়।


পানুরিয়া পঞ্চায়েতের অধীন এই জঙ্গলটি ছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও বন দপ্তরের আধিকারীকদের কাছে নজর কাড়া জঙ্গল । আগুনের খবর পেয়ে বন দপ্তর কর্মীরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে প্রথমে তা নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে আসানসোল থেকে দমকলের ইঞ্জিন নিয়ে আসেন দমকলকর্মীরা। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় জঙ্গলে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও গাছগুলিকে রক্ষা করা যায়নি।
পরে খবর পেয়ে এলাকায় আসেন পানুরিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ সিংহ ও পঞ্চায়েতের কর্মীরা। আসেন বারাবনি থানার পুলিশও। তবে আরো ১২ হেক্টর জমির জঙ্গলকে আগুনের হাত থেকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেছে।


তবে এর আগে গত দু বছরে এই বারাবনি থানার গৌরান্ডী বিট এলাকায় বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে। তাতে হাজার হাজার বড় ও ছোট গাছ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
বারাবনি থানার গৌরান্ডির অলিগঞ্জ মৌজার মেজানডিহি গ্রামের পাশের জঙ্গলে ৩০ হেক্টর জঙ্গলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ৯ বার আগুন লাগানো ঘটনা ঘটেছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গোড়ান্ডির পানুরিয়ার ১০ সেক্টর জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় ১৬ হাজার সোনাঝুরি গাছকে ।
এক বন কর্মী বলেন, এই এলাকায় এভাবেই জঙ্গলে আগুন লাগায় প্রধানতঃ দুষ্কৃতিদের একটা বড় অংশ। তারা আগুন লাগার পর এইসব গাছগুলো নিয়ে পালায়। কোথাও কোথাও আবার ছোট ছোট আগুন লাগা গাছের অংশকে বাড়ির বেড়া গাছ বা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। আবার কোন কোন এলাকায় মাটির নিচে কয়লা থাকায় উপরের গাছগুলোকে পুড়িয়ে সেখানে অবৈধভাবে কয়লা চুরি করে কয়লা চোরেরা। এমনটা দুবছর আগেই দিগলপাহাড়িতে ঘটেছিল। আবার কোথাও কোথাও গাছের পেছনে যে খরচ দেখানো হয় তার অনেকটা ভুয়ো থাকাতেও এমন ভাবে আগুন লাগিয়ে সব পুড়ে গেছে বলা হয়।


এই এলাকার দায়িত্বে থাকা বন দপ্তরের ডিএফও বুদ্ধদেব মন্ডল বলেন, সোমবারের আগুন লাগার ঘটনার কথা দপ্তরের পক্ষ থেকে থানাতে অভিযোগ করা হয়েছে। বারবার এই জেলার মধ্যে গৌরান্ডি এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে আমি উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের সাথেও কথা বলব। অন্যদিকে যেসব বন কর্মীরা জীবনের বাজি রেখে এই ধরনের আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন, তারা বলেন আমাদের আগুন নেভানোর জন্য যে বিশেষ জুতো হাতে পড়ার গ্লাভসের দরকার সেগুলো পর্যন্ত দেওয়া হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *