ASANSOL

সম্পত্তির লোভে মাকে খুন, দোষী সাব্যস্ত বড় ছেলে

কাল সাজা ঘোষণা আসানসোলে জেলা আদালতে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ মা জমিজমা সহ সম্পত্তি লিখে দিচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত সেই সম্পত্তির লোভে মায়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে ও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে বড় ছেলে।
প্রায় ৫ বছর ধরে আসানসোল জেলা আদালতে মামলা চলার পরে শুক্রবার আসানসোলের দক্ষিণ থানার আসানসোল পুরনিগমের ৪৭ নং ওয়ার্ডের ভালুকসোঁধা গ্রামের বাসিন্দা মা মালা টুডুকে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলো বড় ছেলে গোপাল টুডু। এই ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল।


মামলার প্রধান সরকারি আইনজীবী বা পিপি স্বরাজ ওরফে বাচ্চু চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, মামলা চলাকালীন এই গোটা ঘটনার চারজন প্রতক্ষ্যদর্শী সহ মোট ৯ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দান করেন। সব তথ্য প্রমানের পরে এদিন ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারায় গোপাল টুডুকে দোষী সাব্যস্ত করেন অতিরিক্ত জেলা জজ বা এডিজি (১) মনোজ প্রসাদ সিনহা। প্রধান সরকারি আইনজীবী আরো বলেন, শনিবার বিচারক সাজা ঘোষণা করবেন।


পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের ৮৭ নং ওয়ার্ডের ভালুকসোঁধা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৬০ এর মালা টুডুর দুই ছেলে। তার মধ্যে বছর ৩৫ এর বড় ছেলে গোপাল টুডু মায়ের সঙ্গে গ্রামেই থাকতো। ছোট ছেলে বদ্রীনাথ টুডু আসানসোল শহরের আড়াডাঙায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতো। তাদের কিছু পারিবারিক জমিজমা সহ সম্পত্তি ছিলো। গোপাল সেই সম্পত্তি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য মায়ের উপর চাপ দিতো ও জোর করতো। কিন্তু মা মালা টুডু তা করতে চাইতেন না।


শেষ পর্যন্ত গোপাল সম্পত্তির দখল না পেয়ে পরিকল্পনা করে।
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল ভোরবেলা মাকে ঘুম থেকে তুলে গোপাল মাকে টানতে টানতে গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাড়ির অদূরে দামোদর নদীর তীরে নিয়ে যায়। তার হাতে তখন ছিলো কেরোসিন তেলের কৌটো ও একটা কুড়ুল। তা প্রথম দেখতে পান গ্রামের বাসিন্দা ছোটেলাল হেমব্রোম। কিছু একটা ঘটাতে চলেছে গোপাল, তা বুঝতে পেরে তিনি ফোনে মালা টুডুর ছোট ছেলে বদ্রীনাথকে গ্রামে আসতে বলেন। ততক্ষণে গ্রামের লোকেরা গোটা ঘটনার কথা জানতে দামোদর নদীর তীরের দিকে আসেন। তারা দেখে দামোদর নদীর তীরে লখীরাম হেমব্রোমের জমিতে গোপাল মায়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গোপালের হাতে কুড়ুল থাকায় কেউ ভয়ে এগোতে পারেননি। আগুন লাগা অবস্থায় মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গোপাল মায়ের মাথায় ও মুখে বেশ কয়েকবার আঘাত করে। এরপর গোপাল মায়ের আধপোড়া দেহ দামোদর নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য এগোতে থাকে। তখন গোপালের হাতে কুড়ুল না থাকায় গ্রামের মানুষেরা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন।

খবর পেয়ে এলাকায় চলে আসেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুকুল হেমব্রোম। তিনি আসানসোল দক্ষিণ থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। পাশাপাশি পুলিশ গ্রেফতার কর গোপালকে। পরে বদ্রীনাথ টুডু আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারায় একটি খুনের মামলা করে।


প্রধান সরকারি আইনজীবী স্বরাজ ওরফে বাচ্চু চট্টোপাধ্যায় বলেন, সবকিছু তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে একটা বিষয়ে বিচারক নিশ্চিত হন যে, গোপাল টুডু আগে থেকেই খুনের পরিকল্পনা করে মাকে বাড়ি টানতে টানতে বাড়ির অদূরে দামোদর নদীর তীরে নিয়ে যায়। যে কারণে তার হাতে কেরোসিন তেলের কৌটো ও কুড়ুল ছিলো।
পুলিশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিলো। যে কারণেই ৫ বছরের মধ্যেই মাকে খুনে দোষী সাব্যস্ত হলো ছেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *