ASANSOL

আসানসোলে বিতর্ক মহাবীর জয়ন্তীর ছুটিতে স্কুল খুলে ইউনিট পরীক্ষা, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার কাছে কারণ জানলেন ডিআই

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ বলতে গেলে এক সপ্তাহ আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য সরকারের তরফে এনআই এ্যাক্টে মহাবীর জয়ন্তীর ছুটি মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার করা হয়েছে।
সেই নির্দেশকে কার্যত উপেক্ষা করে সোমবার স্কুল খোলা রেখে প্রথম ইউনিট পরীক্ষা নেওয়া হলো। স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্কে জড়িয়েছে আসানসোলের জিটি রোডের উমারানি গরাই মহিলা কল্যান হাইস্কুল। পদাধিকারবলে এই স্কুলের গভর্নিং বডি বা পরিচালন সমিতির সভাপতি হলেন আসানসোলের এসআই বা স্কুল পরিদর্শক সন্দীপ কোড়া। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক যে স্কুলের মাথায় বসে, সেখানে কি করে রাজ্য সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করা হলো? যদিও এসআই এদিন যে ঐ স্কুল খুলে পড়ুয়াদের ইউনিট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না। তিনি এইভাবে স্কুল খোলা রাখায় রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন।


রাজ্য সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে স্কুল খোলা রেখে পরীক্ষা নেওয়া রীতিমতো ক্ষুব্ধ পশ্চিম বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক বা এডিএম ( শিক্ষা) সঞ্জয় পাল। তিনি বিষয়টি জানার পরেই জেলার ডিআই বা স্কুল পরিদর্শক সুনীতি সাঁপুইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া নির্দেশ দেন। এরপর ডিআই ঐ স্কুলের টিচার ইনচার্জ বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি বন্দোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চান কেন এদিন স্কুল খোলা আছে? তার কারণ তিনি লিখিত ভাবে জানাতে বলেন।
এই প্রসঙ্গে টিচার ইনচার্জ বলেন, ডিআই চিটি দিয়ে এদিন কেন স্কুল খোলা আছে তা জানতে চান। আমি তার উত্তর দিয়েছি। স্কুল খোলার পেছনে তার সাফাই, আমাদের স্কুলে মহাবীর জয়ন্তীতে ছুটি থাকেনা। তাই আগেই এদিন ইউনিট পরীক্ষা ও একটি ক্লাসে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন করা হয়েছিলো। তার আরো জবাব, দুই পড়ুয়া চিকিৎসা করাতে বাইরে যাবে। তাদের কথা ভেবে সবার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এনআই এ্যাক্টে ছুটির কথা বলেছেন, সেখানে তিনি কি স্কুল খোলা রাখতে পারেন? এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশকে অমান্য করা হলো না? এর কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।


অন্যদিকে, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা এসআই বলেন, আমি কিছু জানিনা। টিচার ইনচার্জ এই ব্যাপারে কোন আলোচনা আমার সঙ্গে করেননি। এটা কোনদিনই করা যায়না। তিনি আরো বলেন, আমি টিচার ইনচার্জের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এদিন যে স্কুল খুলে পরীক্ষা নেবেন, সেটা আমায় বলেননি। যা আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পারলাম। এটা একবারেই উচিত হয়নি। পাশাপাশি আমার তরফে তাকে আমি যা বলার বলেছি।
জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, সাংবাদিকদের কাছে ঐ স্কুল যে খোলা আছে তা জেনেই ডিআইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছি। এটা ঠিক হয়নি। ইউনিট পরীক্ষা কোন জরুরি ছিলো বলে আমার মনে হয়না।


ডিআই সুনীতি সাঁপুইকে এই জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক আমাকে ফোন করে ঐ স্কুল যে খোলা আছে, তা জানান। পরে সাংবাদিকরা ফোন করেন জানতে চান। আমি সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলি। কেন এনআই এ্যাক্টে ছুটির দিনে স্কুল খুলে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তা লিখিত ভাবে জানাতে বলেছি। তার উত্তর পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, সরকারি ছুটির দিনে স্কুল খুলে রেখে পরীক্ষা নেওয়ার কথা শুনে বিস্মিত তৃনমুল কংগ্রেসের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এটা ঠিক হয়নি। সরকারি নির্দেশ এমন করে উপেক্ষা করা যায় বলে আমার মনে হয়না। আমি যতদূর জানি, এই জেলার পাশাপাশি রাজ্যের প্রায় সব স্কুলেই এদিন পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। ছুটি ঘোষণা হওয়ার পরে সব স্কুলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসানসোলের ঐ স্কুল কেন এমন করলো তা বলতে পারবো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *