ASANSOL

আসানসোল জেলা আদালতে সাজা ঘোষণা, স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারায় দোষী সাব্যস্ত স্বামীর যাবজ্জীবন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol News Today ) বিয়ের পরে দাবি মতো আরো পন না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারায় দোষী সাব্যস্ত স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো। মঙ্গলবার আসানসোল জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ (২) শরণ্যা সেন প্রসাদ এই সাজা ঘোষণা করেন। সাজা প্রাপ্তর নাম বিক্রম গুপ্ত। তার বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার রেলপার এলাকায়। বিচারক একই সঙ্গে ২ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ারর নির্দেশ দেন। সেই জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত আরো ৬ মাস সাজা ভোগ করতে হবে বলে বিচারক তার নির্দেশে বলেছেন।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী বা পিপি তাপস উকিল এদিন বলেন, এই মামলায় মোট ১৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন। তার মধ্যে চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আরো ৪ জনের নামে অভিযোগ ছিলো। কিন্তু প্রমানের অভাবে তারা এদিন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ৫ জনই মামলা চলাকালীন জামিনে বাইরে ছিলেন বলে সরকারি আইনজীবী জানান ।


পুলিশ ও সরকারি আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের জুন মাসে ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবির বাসিন্দা সোনী দেবীর সঙ্গে আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের বাসিন্দা বিক্রম গুপ্তর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের সময় সোনী দেবীর বাপের বাড়ি থেকে পন হিসাবে নগদ টাকা সহ অন্যান্য জিনিস দেওয়া হয়। পরে দুটি সন্তান হয় তাদের। কিন্তু বিয়ের বছর খানেক পর থেকেই বাপের বাড়ি থেকে পন হিসাবে আরো টাকা আনার জন্য অত্যাচার শুরু হয় সোনী দেবীর উপর। ২০০৮ সালের ৬ জুলাই সোনী দেবীর মা আশা দেবী কুমারডুবি থেকে দুই নাতনি নিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসেন। তখন তিনি দেখেন মেয়ের সঙ্গে স্বামী বিক্রম গুপ্তর ঝগড়া হচ্ছে। সেই সময় আচমকাই বিক্রম স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন নিভিয়ে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় সোনীকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সোনী প্রথমে এমারজেন্সি বিভাগে কর্মরত চেয়ে চিকিৎসক ডাঃ স্বাগতা রায় ও পরে ওয়ার্ডে ডাঃ রুহুল আমিনকে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দিয়ে বলে, তার গায়ে স্বামী তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেদিনই আশা দেবী আসানসোল উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৮/এ, ৩২৬ ও ৩০৭ নং ধারায় মামলা করে স্বামী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর সোনীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ১১ জুলাই আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল থেকে ঝাড়খণ্ডের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ২০০৮ সালে ১৬ জুলাই সোনীর মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ ঐ মামলায় ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারা যুক্ত করে।
শেষ পর্যন্ত আসানসোল আদালতে প্রায় ১৫ বছর মামলা চলার পরে মঙ্গলবার মৃত সোনী দেবীর স্বামীর সাজা ঘোষণা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী তার স্বামীর সাজা হওয়ায় সোনী দেবীর বাপের বাড়ির লোকেরা খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *