ASANSOL-BURNPURBihar-Up-Jharkhand

ধানবাদের ঘটনা জঙ্গল থেকে বার্ণপুরের বাসিন্দা এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার, খুনের অভিযোগ, ফেরার স্বামী, এলাকায় চাঞ্চল্য

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য স্বামীর সঙ্গে বেরোনোর পরে জঙ্গল থেকে উদ্ধার হলো গৃহবধূর মৃতদেহ। রবিবার সকালে এই দেহ উদ্ধার করা হয় ঝাড়খণ্ডের নিরসা বিধান সভার তীসরা থানার খাস কুইয়া ১৪ নং ওবি ড্যাম্প সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে থেকে। মৃত গৃহবধূর নাম সুনিতা শর্মা (৩৬)। এই ঘটনার পর থেকে স্বামী উমেশ শর্মা পলাতক। সুনিতা শর্মার ভাই পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের শান্তিনগরের বাসিন্দা লালবাবু শর্মা ইতিমধ্যেই তীসরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এদিন দুপুরে ধানবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।


পুলিশ জানায়, বছর ১৫ আগে বার্ণপুরের বাসিন্দা সুনিতা শর্মার ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের একটি বেসরকারি স্কুলের গাড়ি চালক উমেশ শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের দুটি মেয়ে আছে। তার মধ্যে বড় মেয়ে নয়না দূর্গাপুরে মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। সুনিতা ছোট মেয়ে বছর ১০ সুনয়নাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ধানবাদে থাকতো। গত কয়েক মাস ধরে স্বামী সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সুনিতা ছোট মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন। তখন থেকেই তিনি বাপের বাড়িতে ছিলেন। শনিবার উমেশ শর্মা ফোন করে সুনিতাকে বলে, সে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চায়। সে যেন মেয়েকে নিয়ে চলে আসে। মেয়ে বাবাকে পাবে, এই ভেবে সুনিতা বাপের বাড়ির লোকেদেরকে বুঝিয়ে সে শনিবার আসানসোল থেকে ট্রেনে চাপে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিতে আসার জন্য উমেশ গাড়ি নিয়ে ধানবাদ স্টেশনে অপেক্ষা করছিলো।

জানা গেছে, সুনিতা ও মেয়েকে উমেশ ধানবাদ স্টেশনের কাছে দোকানে খাবার খাওয়ায় ও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। এরপর উমেশ তাদেরকে গাড়িতে চাপিয়ে রওয়ানা দেয়। কিন্তু ধানবাদ শহরের দিকে না নিয়ে গিয়ে উমেশ স্ত্রী ও মেয়েকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। অনেক রাতের দিকে নিরসা বিধান সভার তীসরা থানার খাস কুইয়া ১৪ নং ওবি ড্যাম্প লাগোয়া জঙ্গলের রাস্তায় উমেশ গাড়ি থামায়। আচমকাই সে গাড়ি থেকে লোহার রড বার করে সুনিতার উপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। মাকে মারতে দেখে মেয়ে সুনয়না আটকাতে যায়। তখন সুনিতাকে ছেড়ে উমেশ লোহার রড দিয়ে মেয়েকে মারে। তাতে দুজনেই অচৈতন্য হয়ে যায়। মারা গেছে এই ভেবে উমেশ স্ত্রী ও মেয়েকে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গাড়ি নিয়ে পালায়। মাঝরাতে সুনয়নার ঞ্জান ফিরে আসে। অন্ধকারের মধ্যে কোনমতে সে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে হাঁটতে শুরু করে। বেশ কিছুটা আসার পরে ধানসা থানা এলাকায় সে পৌঁছায়। ভোররাতে একা মেয়েকে দেখে এলাকার বাসিন্দারা তাকে আটকায়। কাঁদতে কাঁদতে সে সব কথা তাদেরকে বলে। তখন এলাকার বাসিন্দারা তাকে ধানসা থানায় নিয়ে যায়।


এদিকে, লালবাবু শর্মা ফোনে বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে শনিবার রাতেই ধানবাদে পৌঁছে যায়। তিনি তীসরা থানার সব ঘটনা বলে বোনের নিখোঁজের ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ সুনিতার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে। গভীর রাতের দিকে তীসরা থানার পুলিশ জঙ্গলের মধ্যে এক অঞ্জাত পরিচয় মহিলার মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর পায়। পুলিশ গিয়ে সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে লালবাবু শর্মা সেই দেহ সনাক্ত করেন। অন্যদিকে তীসরা থানার পুলিশ জানতে পারে ধানসা থানার পুলিশ সুনিতার মেয়েকে পেয়েছে। রবিবার সকালে সুনিতার মেয়েকে পুলিশ লালবাবু শর্মার হাতে তুলে দেয়।
তীসরা থানার পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিবারের তরফে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। স্বামী ফেরার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *