ডাইনীর অপবাদে এক আদিবাসী বৃদ্ধা প্রায় ১৩ দিন ঘর ছাড়া, বাড়ি ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হল আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী , রানীগঞ্জ : আদিবাসী বৃদ্ধার, কাতর আত্মনাদ, আমি ডান নইগো, আমি তোমাদের মতই একটা মানুষ, আমাকে ভালোভাবে বাঁচতে দাও, আমাকে সুস্থভাবে বাঁচতে দাও। আমি কাউকে খাইনি গো, আমি কাউকে খাইনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের, পশ্চিম বর্ধমান জেলার ,অন্ডাল থানা এলাকায় এমনই আর্তনাদ করে, ভয়ে শিউরে ওঠা প্রবীণ বৃদ্ধা, পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে বেড়ালেন। আর সেই আদিবাসী বৃদ্ধা কে, স্বাভাবিক জীবন যাপন করানোর লক্ষ্যে ও তাকে যারা অত্যাচার করেছে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দেওয়ার দাবি করে, অন্ডাল থানার দ্বারস্থ হলেন, আউসগ্রামের আদিবাসী ভারত জাকাত মাঝি পরগনার, মাঝি বাবা লেবু হেমব্রম।
তার দাবি ও বৃদ্ধাকে ডাইনি বলে প্রতিপন্ন করে তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল বেশকিছু জন কু-মতলব কারি প্রতিবেশী। গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরই, বেশ কয়েকজন ওই আদিবাসী বৃদ্ধা কে, এক গুনিনের নিদানে, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, তার মাথা ন্যাড়া করে, নগ্ন করে আগুনে ঝলসে দেওয়া সহ, তার গায়ে বিষাক্ত কাঁটা বিঁধে দেয়। এমনকি তাকে বিষাক্ত কাটার ওপর বোস করিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আর এই সকল অত্যাচার করে তার আশেপাশে থাকা বেশ কয়েকজন পাড়া-প্রতিবেশী। তারা কু মতলব কারে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে, তাকে ঘরছাড়া করার মতলব এঁটেছে বলেই দাবি করলেন, ওই বৃদ্ধার সাথেই তার পরিজন ও আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা।
আজ বিংশ শতাব্দীতে, যখন গ্রহ উপগ্রহ ছাড়িয়ে মানুষ অন্য সৌরজগতের খোঁজ করে, উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কার তুলে ধরছে। সেই সময় ই android এর যুগে এরূপ কুসংস্কার অনেকটাই প্রশ্নের মুখে ফেলছে, পশ্চিম বর্ধমানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষদের প্রতি সামাজিক নিপীড়নের করুণ চিত্র, স্পষ্ট হচ্ছে এই ঘটনা সামনে আসতে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় পশ্চিম বর্ধমানে, গুণীনের দেওয়া ডাইনীর অপবাদে, অণ্ডাল থানার দক্ষিণখণ্ড এলাকায় এক আদিবাসী বৃদ্ধা, প্রায় ১৩ দিন ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছে। এমনই অভিযোগ নিয়ে অসহায় ওই নির্যাতিতা কে বাড়ি ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হল আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা। বৃদ্ধার দাবি, অভিযুক্ত গুণীন নিদান দিতেই কিছু পাড়া-প্রতিবেশী,তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। তারা তার মাথা ন্যাড়া করে, নগ্ন করে, আগুনের ছ্যাকা দেওয়ার মত পৈশাচিক অত্যাচার চালায়। তাকে মারধর করে প্রাণে মেরে ফেলতে চায় বলেও অভিযোগ। পরে তাঁকে আহত অবস্থায়, কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।এদিন সে সুস্থ হতেই, তাঁকে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা। অভিযুক্ত গুণীন সহ মোট ১৫ জন নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর – ফরিদপুর ব্লকের বিডিও ও অণ্ডাল ও ফরিদপুর থানার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নির্যাতিতা বছর ৬০’র বৃদ্ধা বলেন, ফরিদপুর থানার ইচ্ছাপুর এলাকার বাসিন্দা গুণীন – ওঝা । সে আমাকে তুকতাক করার দোষ দিয়ে
ডাইনী অপবাদ দেয়। এই মাসের ৭ তারিখ রাত্রে প্রায় ১০ – ১৫ জন তার ওপর চড়াও হয়। তাকে মারধর করে। সে অচেতন হয়ে পড়লে তারা তাকে নিস্তার দেয়। পরে, সারারাত ধরে পাশবিক অত্যাচার করে। ২০ হাজার টাকা ছেলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। তার ছেলে ও মেয়ে বাঁধা দিতে গেলে, তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে দাবি। পরে তাকে কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে তার আত্মীয়রা। ওই দিন থেকে সে আতঙ্কে ঘর ছাড়া। তার দাবি, ওই গুণীন সহ, দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। ভারত জাকাত মাঝি পারগনার মাঝি বাবা, লেবু হেমব্রম বলেন, ওই বৃদ্ধাকে ডাইনী অপবাদ দিয়ে পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে। মলমূত্র মিশিয়ে তাঁকে জোরপূর্বক খাওয়ানো হয়েছে। আমরা ডাইনীপ্রথার বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছি আমরা বলেই জানান।