ASANSOL

যাদবপুর কান্ড : গ্রেফতার আসানসোলের আসিফ আনসারি, মানতে নারাজ পরিবার , ফেঁসে গেছে, দাবি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল উত্তর বিধান সভার আসানসোলের রেলপারের কেটি রোডের বাসিন্দা মহঃ আসিফ আনসারি। সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া। কয়েকদিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুর রহস্য মৃত্যুর ঘটনা মঙ্গলবার গভীর রাতে গ্রেফতার হয় আসানসোলের বাসিন্দা আসিফ আনসারি। তার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে আরো ৫ পড়ুয়া। বুধবার এই ধৃত ৬ জনকে যাদবপুর থানার পুলিশ ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

আসিফ আনসারির বাবা আফজল আনসারি বাড়ি বাড়ি কাপড় ফেরি করে কোনমতেই সংসার চালান। মা ইসরত পরভীন সাধারণ গৃহবধূ। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় হলো আসিফ। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলে রেলপার এলাকার প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। দুস্থঃ পরিবারের স্বপ্ন ছিল আসিফ পড়াশোনা করে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। নিজের পরিবারকে সে নতুন আলো দেখাবে। তার পরিবর্তে আসিফ বর্তমানে এই পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে এখন পুলিশের হেফাজতে। ফলে গোটা পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে আজ চুরমার। এই টালির বাড়িতে শুধুই হতাশা।


শুধু বাবা আফজাল আনসারি নয়, মা ইসরত পরভীন থেকে দাদু হানিফ মহম্মদ , কাকিমা সাহানা খাতুন থেকে সকলের দাবি, ছেলে নির্দোষ। তারা মনে করেন তাদের ছেলে পরোপকারী। এই ছেলেকে ঘিরেই যাবতীয় স্বপ্ন দেখা তাদের। কিন্তু সেই ছেলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে সাহায্য করতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। এমনই দাবি করলেন তার দাদু সহ পরিবারের সদস্য অনেকেই। কাকিমা বলেন, আসিফের গ্রেফতারির খবর পেয়েছিলেন তার বাবা ও মা মঙ্গলবার রাতে। তার পর থেকে ঘন ঘন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন মা।


তিনি আরো বলেন, ছেলের গ্রেফতারি আমার ভাইয়া ও ভাবির কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ও কোন খারাপ কাজ করতে পারে না।
আসিফের দাদু বলেন, যৌথ পরিবারে সবাই এই ঘরেই থাকি। মঙ্গলবার রাত ১০-১১টার মধ্যে ছেলের সঙ্গে বাবা মার কথা হয়েছিল। তখন আসিফ জানায়, সে পড়াশোনা করছে। এর পর রাত দেড়টা নাগাদ তারা খবর পান, আসিফ-সহ বেশ কয়েক জনকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। আমরা ভেবে উঠতে পারছি না, কোথা থেকে কি হলো। এখনই বা আমরা কি করবো।


আনসারি পরিবারের টালির চাল দেওয়া ঘরের খুব কাছেই থাকেন আসানসোল পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গোলাম সরবর। তিনি বলেন, দুস্থঃ আফজল কাপড়ের ফেরি করে সংসার চালান। ওদের বাড়িতে খুবই অনটন। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আসিফ বড় ছেলে। স্থানীয় রহমানিয়া স্কুলে পড়াশোনার পরে সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ওকে নিয়েই পরিবারের যত স্বপ্ন। বাকি দুই ছেলে প্রাথমিকে পড়াশোনা করে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।


পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দু’দিন পরে আসানসোলের বাড়িতে এসেছিল তাদের ছেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন করে তাকে ডাকা হয়। তাই বাড়ি এসে দু’দিন পরেই কলকাতা চলে যান। ছুটি পেলেই সে আসতো। এলাকায় কারোর পড়াশোনা নিয়ে যদি কোন সমস্যা হতো তাহলে তাদের সাহায্যও করতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার কথাও সে নাকি বাড়িতে এসে গল্প করেছিল। আসিফ যে পরোপকারী ছিলো, তা স্থানীয় মানুষেরা জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, বুধবার সকালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করে এক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারের বেশ কয়েকজন কলকাতায় চলে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *