আসানসোলে জ্বরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু , আক্রান্ত পুলিশ কনস্টেবল সহ ৭ জন ভর্তি জেলা হাসপাতালে
একদিনে বিজেপির জেলা সভাপতির মা সহ দুজনের মৃত্যু
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল পুরনিগম সহ গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে জ্বরের প্রকোপ দিন প্রতিদিন বাড়ছেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ডেঙ্গু। তারই মধ্যে আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনে মৃত্যু হলো আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বার্ণপুর ও জামুড়িয়ার বাসিন্দা দুই মহিলার। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের মা। এই নিয়ে গত ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে মোট তিনজনের মৃত্যু হলো। একই সঙ্গে রবিবার দুপুর পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। তার মধ্যে একজন রয়েছেন রাজ্য পুলিশের আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে কর্মরত এক কনস্টেবল। পাশাপাশি রবিবার দুপুর পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৫০ জনেরও বেশী রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন বলে জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
দিন প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় নাজেহাল অবস্থা জেলা হাসপাতাল কতৃপক্ষের। এক একটা বেডে তিনজন রোগীকে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে। হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, এত রোগীর চাপ। তাই তাদের কিছু করার নেই।
প্রসঙ্গতঃ, শনিবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি থাকা এক মহিলার মৃত্যু হয়। আসানসোল পুরনিগমের জামুড়িয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নন্ডী গ্রামের বাসিন্দা মৃত মহিলার নাম বুধনী হাঁসদা (৩৭)। সে এলাকার একটি ইট ভাটায় কাজ করতো। গত ২০ আগষ্ট এই মহিলাকে অসুস্থ অবস্থায় জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। পরে রক্ত পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। সেখানে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে, বার্নপুরের আপার পুরান হাটের নতুন পল্লীর বাসিন্দা চন্দনা চট্টোপাধ্যায় (৬৫) গত বৃহস্পতিবার জ্বর ও হৃদরোগ সংক্রান্ত অসুস্থতা নিয়ে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর অন্যান্য অসুস্থতার সঙ্গে ডেঙ্গুরও চিকিৎসা শুরু হয়। তিনিও শনিবার ঐ বেসরকারি হাসপাতালে সকালে মারা গেছেন বলে জানান তার ছেলে বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়।
রবিবার সকালে আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তরে কাছে এই দুটি মৃত্যুর খবর আসে।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তরের মেয়র পারিষদ দিব্যেন্দু ভগত বলেন, দুটি ক্ষেত্রেই পুরনিগমের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পুরনিগমের ৯০০ র বেশি টিম গোটা পুর এলাকায় ডেঙ্গুর মোকাবিলায় কাজ করছে। কোথাও যাতে জল না জমে তা দেখার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় মানুষকে সচেতন করছেন টিমের সদস্যরা।
এর আগে গত ১৭ আগষ্ট দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসানসোল পুরনিগমের ৪২ নং ওয়ার্ডের এসবি গরাই রোডের রাঙ্গানিয়া পাড়ার ২০ বছরের কলেজ পড়ুয়া অবিনাশ সাউয়ের মৃত্যু হয়েছিলো। তাকে আগের দিন আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন ঘন্টার মতো ঐ যুবক জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। কিন্তু রাতে তাকে বাড়ির লোকেরা দূর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এই ঘটনার পরে আসানসোল পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। তড়িঘড়ি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষ আধিকারিক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে যৌথ ভাবে বৈঠক করে। বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, এখন ৭ জনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। শনিবার জামুরিয়ার বাসিন্দা এক মহিলা হাসপাতালে মারা গেছেন। গত ৭ দিনেরও বেশি সময় ধরে জেলা হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২৫ জন থেকে ১৫০ জনের মধ্যে থাকছে। সম্প্রতি এটা বেড়েছে। আগে এটা ৪০-৫০ এর মধ্যে ছিল।
এইসব তথ্যই প্রমাণ করে যে, এই মুহুর্তে ডেঙ্গু ও জ্বর আসানসোল পুরএলাকা সহ গোটা শিল্পাঞ্চলে একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এদিন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান বলেন, জেলায় এখনো পর্যন্ত ৩৩২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন । সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন দুর্গাপুর পূর এলাকায় ১৮৮ জন।
আসানসোল পুর এলাকায় ১০৮ জন , কাঁকসায় ১২ জন, লাউদোহায় ৬ জন , রানিগঞ্জে ৫ জন , জামুরিয়ায় ৫ জন৷ অন্ডালে ৪ জন, বারাবনিতে ৩ জন ও পাণ্ডবেশ্বর ১ জন। তিনি আরো বলেন, শনিবার যে দুজন মারা গেছেন, তারা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। আমরা বারবার মানুষদেরকে বলছি, কোন কিছু লুকোবেন না। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যান। স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সহযোগিতা করুন। তারা যা করতে বলছে, তা করুন ও মেনে চলুন। পাশাপাশি সচেতন হন। তাহলে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষে সুবিধা হবে।