ASANSOL-BURNPUR

গৃহবধূকে ভয় ইস্কোর জিএমের আবাসন থেকে লুঠ নগদ সহ কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না

রেল শহর চিত্তরঞ্জনের পরে ইস্পাত নগরী বার্ণপুর , তিন সপ্তাহের মধ্যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি

বেঙ্গল মিরর, বার্ণপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রেল শহর চিত্তরঞ্জনের পরে ইস্পাত নগরী বার্ণপুর। তিন সপ্তাহের মধ্যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। প্রায় একই কায়দায় একা থাকা গৃহবধূকে কর্মক্ষেত্রে থাকা স্বামীর কথা বলে ভয় দেখিয়ে ইস্কো কারখানার এক জিএমের আবাসন থেকে এক দূষ্কৃতি লুঠ করলো নগদ সহ কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রিভারসাইড এলাকায়। প্রকাশ্য দিবালোকে হওয়া এমন ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রিভারসাইড এলাকায় আবাসনে থাকা সেইল আইএসপি ( ইস্কো স্টিল প্ল্যান্ট) বা ইস্কো কারখানার আধিকারিক ও কর্মীদের পরিবারের সদস্য। খবর পেয়ে হিরাপুর থানার পুলিশ বেনুগোপাল রাও নামে ঐ জিএমের আবাসনে পৌঁছায়। জিএম গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে হিরাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঐ আবাসন যাতায়াতের রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ ঐ দূষ্কৃতিকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছে।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকাল পৌনে দশটা নাগাদ ধোপদুরস্ত পোশাকে এক যুবক বার্ণপুর ইস্কো কারখানা জিএম বেনুগোপাল রাওয়ের রিভারসাইড এলাকার আবাসনে ( টিএস / সি ৫) আসে। সেই সময় জিএমের স্ত্রী বাড়িতে একাই ছিলেন। হিন্দিতে কথা বলা ঐ যুবক জিএমের স্ত্রীকে বলে, আপনার স্বামী কারখানায় বড় বিপদে পড়েছেন। বাড়িতে যা আছে, আমাকে দিয়ে দিন। এই কথা শুনে জিএমের স্ত্রী ভয়ে ঘরের মধ্যে আলমারিতে থাকা নগদ টাকা ও সোনার গয়না সবকিছু দিয়ে দেন। এরপর ঐ যুবক মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু নিয়ে চম্পট দেয়। পরে জিএমের স্ত্রী বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। গোটা ঘটনার কথা স্বামীকে বলেন। তিনি ছুটে আসেন। চলে আসেন প্রতিবেশীরাও।
ঐ আবাসন এলাকায় থাকা ইস্কো আধিকারিক প্রভাত রানা বলেন, এই নিয়ে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। একটা চক্র এই কাজ করছে আমরা বুঝতে পারছি। ভাষার সমস্যা আছে, আবাসনে বয়স্ক বা মহিলা একা থাকার সময়টা কাজে লাগানো হচ্ছে। আমরা আবাসন এ্যাসোসিয়েশন থেকে সবাই সতর্ক করছি। আর কি করা যায়, তাও দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনা নিয়ে জিএম ও তার স্ত্রী কোন মন্তব্য করেননি।



এদিকে পুলিশ জানায়, ঐ যুবক একাই এসেছিলো মোটরবাইক করে। তার খোঁজ করা হচ্ছে। জিএম একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে তিনি নগদ টাকা ও প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতো সোনার গয়ন খোয়া গেছে বলে জানান।
অন্যদিকে, চিত্তরঞ্জনে হওয়া ঐ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে সম্ভাব্য এক দুষ্কৃতির স্কেচ প্রকাশ করল পুলিশ। প্রতারিত গৃহবধূ ওয়াই যজ্ঞেশ্বরীর বয়ান অনুযায়ী পুলিশের এক শিল্পী এই স্কেচ এঁকেছেন বলে জানা গেছে । সম্ভাব্য এই দুষ্কৃতির কোনরকম হদিশ পেলে চিত্তরঞ্জন থানায় জানানোর আবেদন করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট সকালে যজ্ঞেশ্বরী দেবীর স্বামী রেল কর্মী ইয়েলাপ্পা রামন মূর্তি চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার ২৩ নম্বর শপে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় এক দুষ্কৃতি তার ৫৪ নম্বর রাস্তার ২১/এ কোয়ার্টারে এসে স্বামীর বিপদের কথা বলে গয়না নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। কারখানায় সিবিআই তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। তাতে শ্রীমূর্তির বিপদের আশঙ্কা আছে। তার কোয়ার্টারেও সিবিআই তল্লাশি চালাবে এই ভয় দেখিয়ে যোগেশ্বরী দেবীর কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে এই দুষ্কৃতি পালিয়ে যায়। পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টির তদন্তে নামে। এবার সেই দুষ্কৃতির ছবি প্রকাশ্যে নিয়ে এলো পুলিশ। যাতে, দূষ্কৃতিকে ধরা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *