ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

কয়লা খনিতে দুর্ঘটনা, মৃত এক আহত দুই

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : কয়লা খনির গহ্বরে দুর্ঘটনার পর আহত খনি কর্মীদের উদ্ধার করা হল বস্তায় করে, কয়লা বোঝাই করা ট্রলারের মাধ্যমে। গুরুতর আহত খনি কর্মীদের বিস্তীর্ণ পথ নিয়ে আসা হল এভাবে ট্রলারে জড়োসড়ো ভাবে ভরে , জীবনকে বাজি রেখে কয়লা খনিতে কয়লা উত্তোলন করতে যাওয়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য, জুটলো না কোন স্ট্রেচার, ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়নি,কোন চিকিৎসক দলও।

বৃহস্পতিবার এমনই বিষয় লক্ষ্য করা গেল অন্ডাল এর এক কয়লা খনিতে।
এবার কয়লা খনির দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো খনি অঞ্চল কেন্দা এরিয়া। এবার বৈধ খনির গহ্বরে, কয়লা খনির অভ্যন্তরে, খনি গহ্বরের চাল ঝাড়াই করতে গিয়ে, কয়লা খনির নিচে চাপা পড়লো তিন খনি কর্মী। ঘটনাটি ঘটে অন্ডাল থানা এলাকার, কেন্দা এরিয়ার, বহুলা কোলিয়ারীতে, যা রিয়েল জামবাদ কোলিয়ারি নামে পরিচিত, সেই কয়লা খনিতে। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, এদিন ওই কোলিয়ারিতেই ফার্স্ট শিফটে কাজ করতে যান বছর ৪৮ এর মাইনিং সরদার সারদা চরণ মাহান্তি, সঙ্গে যান দুই খনি কর্মী বছর ত্রিশের মনোজ ভূঁইয়া ও বছর ৫৫ র আসুতোষ মাজি। তারা এদিন কয়লা খনি র ৩১ নম্বর ডিপের ২১ নাম্বার লেবেলে কাজ করার সময়, হঠাৎই লেগিং যা কয়লার অভ্যন্তরে ফাঁপা অংশকে বলা হয় সেই লেগিং থাকা অংশে চাল ঝাড়াই করার সময় ২৫ মিটার চাল ধসে পড়ে। মুহূর্তে একটা বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ধস নামায়, সেই কয়লা স্তরের নিচে চাপা পড়ে যায় ওই তিন খনি কর্মী।

এই বিষয়টি লক্ষ্য করেই ওই খনিতে থাকা অন্য সকল কর্মীরা মুহূর্তে খনি আধিকারিকদের টেলিফোন মারফত ঘটনার খবর দিলে তারা অন্য খনি কর্মীদের সহায়তায় কোন স্ট্রেচার না থাকায়, বস্তার মধ্যে তাদের রেখে, ঐ খনি কর্মীদের দীর্ঘ পথ ট্রলিতে করে নিয়ে এসে, প্রায় এক দেড় ঘন্টা পর খনির ওপরে তাদের নিয়ে আসে। এদিকে এই ঘটনার খবর জানতে পেরে, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা, ঘটনাস্থলে পৌঁছে কি কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী স্থানীয়রা দাবি করেন এই ঘটনায় যুক্ত যে সকল আধিকারিক রয়েছেন, যাদের গাফিলতির জেরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি করেন। এ নিয়ে তারা ডিজিএমএস এর তদন্তের দাবিও তোলেন।

এই ঘটনার খবর জানার পরই ঘটনাস্থলে হাজির হন আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশ গোপাল চৌধুরী, জামুরিয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, পাণ্ডবেশ্বর এর বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে স্থানীয়রা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেন। বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেত্রী স্থানীয়রা জানান খনি অভ্যন্তরে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি খনি কর্তৃপক্ষ নেই কোন চিকিৎসার পরিকাঠামো যার জেরে খনি কর্মীদের ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এই ঘটনায় তিন খনি কর্মীর মধ্যে ওভারম্যান সারদাচরণ মহান্তি কে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করে।

একই সাথে ই অপর দুই খনি কর্মী এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কয়লা খনির শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা দাবি করেছেন, ইসিএল ইচ্ছাকৃতভাবেই একের পর এক এ ধরনের মানুষগুলিকে বিপজ্জনক অবস্থায় রেখে ভূগর্ভস্থ খনি গুলিকে বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে, যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। দুর্গাপুজোর ঠিক সময় কালেই এ ধরনের ঘটনা ঘটায় হতবাক মৃতের পরিবার পরিজন জানা গেছে মৃত ওই মাইনিং সদ্দারের বাড়ির সদস্যরা এদিন দুর্গাপুজোর বাজার করতে দুর্গাপুর মার্কেটে গেছিলেন সেই সময়ই এই ঘটনার খবর পেয়ে তারা দুর্গাপুর হাসপাতালে পৌঁছে হতচকিত হয়ে পড়েন। কেন বারংবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন সমস্ত রাজনৈতিক মহল। এই ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তারও দাবি করেছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *