মহাষষ্ঠীতে কুলটিতে মর্মান্তিক ঘটনা, ঘর থেকে বাবা, মা ও ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
আর্থিক সংকটের কারণে আত্মঘাতী, অনুমান পুলিশের
বেঙ্গল মিরর, কুলটি ( আসানসোল), রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ* মহাষষ্ঠীতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটি থানার বরাকরের নালি পাড়া এলাকায়। বাড়িতে ঘরের ভেতর থেকে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হলো বাবা, মা ও ছেলের ঝুলন্ত দেহ। শুক্রবার বিকেলের এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কুলটি থানার পুলিশ তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। শনিবার সকালে তিনটি মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হবে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, আর্থিক সংকটের কারণে দূর্গাপুজোর মহাষষ্ঠীর দিনে বাবা ও মা এবং ছেলে একসঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ মৃতদের আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক কি কারণে তারা এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মৃত তিনজনের নাম হলো সুদীপ্ত রায় (৬৬), শ্বেতা রায় (৫৩) ও অগ্নিশংকর রায় (২৯)।
কুলটি থানার পুলিশ সূত্র থেকে জানা গেছে, রায় বাড়ি থেকে পুলিশ আলাদা আলাদা তিনটি সুইসাইড নোট বা চিঠি উদ্ধার করেছে। তবে সেগুলোতে ঠিক কি লেখা আছে তা নিয়ে পুলিশের তরফে জানায়নি। তবে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, তিনজন তাদের এই মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি।




স্থানীয় বাসিন্দা তথা রায় পরিবারের প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার সকালেও বাবা সুদীপ্ত রায়, মা শ্বেতা রায় ও তাদের ছেলে অগ্নিশংকর রায় এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছিলো। আর বিকেল পাঁচটার সময় তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাদের অনুমান, দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, রায় দম্পতির ছেলে অগ্নিশংকর রায় বাড়িতে বাড়িতে ছেলেমেয়েদের কোচিং বা প্রাইভেট টিউশন করাতেন। সে বরাকরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিল কোনো ব্যবসায় নামে। তারপর তার মাও কিছু টাকা অন্য একটি ব্যাংক থেকে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসা বাড়ানো তো দূরের কথা, রায় পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে গেছিলো। বরাকরের ঐ দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণের টাকা তারা শোধ করতে পারছিলেন না। এরজন্য ব্যাংকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে তাদের কথাও বলেছিলেন। আস্তে আস্তে এই পরিবারের উপর সংকট নেমে আসে। সেই কারণেই তিনজন পরিকল্পনা করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। জানা গেছে, তারা তাদের নিজস্ব কিছু জিনিস কাপড়ে করে বেঁধে আলমারি থেকে বাইরে রেখেছিলেন।
অন্যদিকে এই রায় পরিবারের কলকাতায় থাকা এক আত্মীয় অজয় সিনহা বলেন, শুক্রবার সকালে আমার বৌদির বাড়ি থেকে এই বাড়িতে ফোন করা হয়েছিলো। কিন্তু তাদের তিনজনেরই ফোন সুইচ অফ পাওয়া যায়। তখন তাদের সন্দেহ হয়। এরপরেই প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারেন যে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তারা নাকি আত্মহত্যা করেছেন। অজয়বাবু আরো বলেন, সুদীপ্তবাবু নার্ভের অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। কিন্তু কেন তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তা বলতে পারব না। শুনছি আর্থিক কোন সংকট বা ব্যাংক ঋণের বিষয় থাকতে পারে। এটা অবশ্য আমাদের জানা নেই।
কুলটি থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৃষ্ণেন্দু দত্ত বলেন বরাকর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় একটি ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ যায়। একটি বাড়ি থেকে পুলিশ বাবা, মা ও ছেলের তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আলাদা আলাদা তিনটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছে, তিনজনই কোন অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। শনিবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দেহগুলির ময়নাতদন্ত হবে। তারপর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।