ASANSOL-BURNPUR

শ্বশুরবাড়ি থেকে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, সেইল আইএসপি কর্মী স্বামী সহ আটক ৫

বার্ণপুরের ঘটনা, বিয়ের পর থেকে আরো পনের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ শ্বশুরবাড়ি থেকে এক গৃহবধূর গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হলো। সোমবার রাতের এই ঘটনায় আসানসোলে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের নিউটাউন ছোটদিঘারী এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত গৃহবধূর নাম পিয়ালি মাজি (২৪)। বাপের বাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতার স্বামী সহ মোট ৫ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।
জানা গেছে, মৃতার ৪ বছরের মেয়ে সোমবার রাতে হিরাপুর থানার পুলিশ ও মঙ্গলবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়ে বলেছে যে, তার বাবা মাকে মারধর করতো। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে তাকে পড়াচ্ছিলো। তখন তার বাবা মাকে ডেকে নিয়ে যায় ও মারধর করে। তারপর মায়ের দেহ পাওয়া যায়।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

file photo


জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে আসানসোলের বারাবনি থানার পানুরিয়ার বাসিন্দা পিয়ালি মাজির সঙ্গে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের নিউটাউন ছোটদিঘারীর বাসিন্দা সেইল আইএসপি বা ইস্কো কারখানার কর্মী সুমন মাজির বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বাপের বাড়ি থেকে পন হিসাবে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা, একটি স্কুটি, সোনার গয়না সহ অন্যান্য জিনিস দেওয়া হয়েছিলো। অভিযোগ, বিয়ের মাস কয়েক পর থেকে বাপের বাড়ি থেকে পন হিসাবে আরো ৫ লক্ষ টাকা পন হিসাবে আনার জন্য পিয়ালির উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু হয়। কন্যার জন্ম দেওয়ার পরে সেই অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। আরো অভিযোগ, মেয়েকে বড় করে তোলার জন্য পিয়ালিকে আরো ৫ লক্ষ টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনার জন্য স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি চাপ দেওয়া শুরু করে।


জানা গেছে, দূর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন স্ত্রী পিয়ালি ও ৪ বছরের মেয়ে দিশাকে বাপের বাড়িতে রেখে আসে স্বামী সুমন মাজি। গত শুক্রবার তারা আবার পিয়ালি মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে আসে। এর মধ্যে পিয়ালি দূর্গাপুজোর সময়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে তোলা ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোষ্ট করে। তা তার স্বামী দেখতে পায়। যা নিয়ে স্বামী সন্দেহ করতে শুরু করে পিয়ালিকে।
সোমবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ পিয়ালির বাবা বিশ্বনাথ মাজি তার শ্যালকের কাছ থেকে খবর পান যে, শ্বশুরবাড়িতে মেয়ে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি কয়েকজনকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আসেন। তখন তিনি দেখেন মেয়ের গায়ে কোন জল নেই। গলায় কালো দাগ রয়েছে। তাকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। তিনি মেয়েকে নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন। সেখানে এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের তরফে বলা হয়, পিয়ালি মাজির গলায় দড়ির ফাঁস লাগানোয় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার বিশ্বনাথ মাজি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের সময় পন দেওয়া সত্বেও আরো ৫ লক্ষ টাকা চেয়ে অত্যাচার শুরু হয়। যা করতো স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও জামাইয়ের তিন মামা। মেয়ে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে, আরো ৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। তার ভরণপোষণের জন্য। আমি তা দিইনি। তিনি আরো বলেন, মেয়ে দূর্গাপুজোর সময় এসে কিছু ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেছিলো। তা নিয়ে জামাই সন্দেহ করা শুরু করে। অত্যাচার বেড়ে যায়। সোমবার রাতে খবর পেয়ে যাই মেয়ের শ্বশুর বাড়ি। তার দাবি মেয়েকে জামাই, শ্বশুর, শাশুড়ি ও তিন মামা শ্বশুর গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে নিয়ে খুন করেছে।


এদিকে, হিরাপুর থানার পুলিশ জানায়, শ্বশুর বাড়ি থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে, তাদের গ্রেফতার করে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে। তবে কি কারণে ঐ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে, তা পুলিশ এদিন জানাতে পারেনি। পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তা পরিষ্কার বোঝা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *