আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক উৎসবের মরশুমে প্রায় ” শুন্য “, জরুরী ভিত্তিতে শিবিরের আয়োজন
রক্ত দিলেন সুপার, ডেপুটি সুপার সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* সদ্য পার হয়েছে দূর্গাপুজো ও লক্ষীপুজো। সামনেই রয়েছে কালিপুজো, ছটপুজোর মতো উৎসব। আর এই উৎসবের মরশুম বা ফেস্টিভ পিরিয়ডে প্রায় ” শুন্য ” বা ” অলমোস্ট ড্রাই ” আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে থ্যালাসেমিয়া রোগীদেরকে রক্তের যোগান দিতে নাজেহাল অবস্থা জেলা হাসপাতাল কতৃপক্ষের। অন্য রোগীদেরকেও হাসপাতাল কতৃপক্ষ রক্ত দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। চাহিদার তুলনায় যোগানের ফারাক বিস্তর।
গোটা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বুধবার জেলা হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ নিজেরাই জরুরী ভিত্তিতে একটি রক্তদন শিবিরের আয়োজন করতে বাধ্য হন। জেলা হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি ভবনে হওয়া এই শিবিরের ৩৬ জন রক্তদান করেন। রক্তদাতাদের মধ্যে যেমন আছেন জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস, ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায়, তেমন আছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী থেকে হাসপাতালের প্রশাসনিক স্তরের আধিকারিকরা।
জেলা হাসপাতালের সুপার বলেন, বলতে গেলে প্রতি বছরই এই উৎসবের মরশুমে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের একটা ঘাটতি বা ক্রাইসিস হয়। কিন্তু লক্ষ্য করা গেলো এবার এবার এই ক্রাইসিসটা খুবই মারাত্মক। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কার্যত আমাদের কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের সময় বলতে গেলে ব্লাড ব্যাঙ্ক প্রায় শুন্য বা ড্রাই হয়ে যায়। এরপরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বুধবার সকালে আমরা হাসপাতালে রক্তদান শিবির করবো। জরুরী ভিত্তিতে কাউকে বলার চেয়ে নিজেদের আয়োজন করাটা সহজ মনে হয় আমাদের কাছে। তাই এদিন শিবির করা হয়। সুপার আরো বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেকটাই বেড়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে থ্যালাসেমিয়া, প্রসূতি মা, দূর্ঘটনায় পড়া রোগীরা। তাদের রক্ত পাওয়াটা অনেক এমারজেন্সি। এর উপর রয়েছে বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের চাপ। তাই এদিন আমরা এই শিবির করে এদিনের মতো রক্তের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানো গেলো, তেমন একটা বার্তা দেওয়া গেলো।
জানা গেছে, এদিনের রক্তদান শিবির হওয়ার আগে আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সব গ্রুপ মিলিয়ে ২২ ইউনিট রক্ত মজুত ছিলো। যেখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষকে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ ইউনিট রক্ত যোগান দিতে হয়। আরো জানা গেছে, মঙ্গলবারই জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে থেকে ৮২ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর শেষ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেই শিবির থেকে মাত্র ১৭ ইউনিট রক্ত পাওয়া যায়।
জেলা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ ডাঃ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, উৎসবের মরশুমে রক্তের সংকট বা ঘাটতি একটা থাকে। কিন্তু এই বছরে তা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। রক্তের চাহিদা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আর সময়ে রক্ত না মিললে রোগীর প্রাণ সংশয় দেখা দিতে পারে। তাই আমরা নিজেরা এদিন এই শিবিরের আয়োজন করে একটা বার্তা দিলাম। তিনি আরো বলেন, এই রক্ত সংকটের কথা জানতে পেরে আসানসোল গ্রামের একটি সংগঠন বৃহস্পতিবার রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে চেয়ে আবেদন করেছে। আমাদের আবেদন, যেখানে যত ক্লাব বা সংগঠন আছে তারা এই সময়ে নিজেদের মতো করে রক্তদান শিবির করুক। না পারলে, তারা জেলা হাসপাতালে আসুক। সেখানে আমরা ব্যবস্থা করে দেবো। এটা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।