আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সাইবার অপরাধে আবারও ” জামতাড়া গ্যাং ” র যোগ , একাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর ঘটনায় ধৃত ৩
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চলে আবারও সাইবার অপরাধ বা ক্রাইমের ঘটনায় ” জামতাড়া গ্যাং” র যোগসূত্র মিললো। চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাঙ্কের একাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতানোর একটি ঘটনায় ” জামতাড়া গ্যা” র তিনজনকে গ্রেফতার করলো আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল সাইবার ক্রাইম পুলিশ স্টেশন। ধৃতদের নাম হলো চঞ্চল পাল, সঞ্জয় মন্ডল ওরফে এবং অনিল শর্মা। আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার বল্লভপুরের সাহেববাঁধের বাসিন্দা চঞ্চল পালকে গত গ্রেফতার করার পরে গত বুধবার সাতদিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে সাইবার থানা। একইভাবে বাঁকুড়ার মেজিয়ার বাসিন্দা সঞ্জয় মন্ডল ওরফে গণেশকে বৃহস্পতিবার ও আসানসোলের অনিল শর্মাকে শুক্রবার ৫ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে ২০ টি এটিএম কার্ড ও নগদ ২৫ হাজার টাকা সাইবার থানার তদন্তকারী অফিসাররা পেয়েছেন।
বারে বারে পশ্চিমবাংলার কলকাতা, আসানসোল সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সাইবার অপরাধের ঘটনায় ” জামতাড়া গ্যাং “র হাত থাকার অভিযোগ উঠছে। তারই মধ্যে একটি ঘটনায় সেই গ্যাংয়ের সঙ্গী হিসাবে তিনজনকে গ্রেফতার করা আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানার একটা বড় সাফল্য বলা যেতেই পারে।




আসানসোল সাইবার থানার এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ধৃত সঞ্জয় মন্ডল ওরফে গণেশের সরাসরি যোগ রয়েছে ঝাড়খণ্ডের ” জামতাড়া গ্যাং “র মুল চক্রী বা পান্ডাদের। ধৃত অনিল শর্মা আসানসোল একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানির স্টোরের কর্মী। তার কাজ ছিলো সাইবার অপরাধের মাধ্যমে প্রতারণা করে হাতানো টাকা নির্দিষ্ট একাউন্টে জমা পড়লে, তা এটিএম কার্ড দিয়ে তুলে নেওয়া। সেই টাকাটা এরপর সঞ্জয় মন্ডল ওরফে গণেশ ” জামতাড়া গ্যাং ” র কাছে পৌঁছে দিতো। এর বিনিময়ে তারা একটা কমিশন পেতো। ঐ আধিকারিক বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা যা জানতে পেরেছি, তা হলো এই চক্র বছর চারেক ধরে সক্রিয় রয়েছে। ধৃত তিনজনকে একসঙ্গে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে। এখন আমাদের লক্ষ্য এই গ্যাংয়ের মাথা পর্যন্ত পৌঁছে পাণ্ডাদের গ্রেফতার করা।
সাইবার থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে আসানসোলের সালানপুর থানার রুপনারায়নপুরের বাসিন্দা জনৈক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। মুলতঃ এটিএম কার্ডের ” উইথড্র লিমিট ” বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে সুকুমারবাবুর স্ত্রীর কাছ থেকে ” ওটিপি ” নিয়ে ঐ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো সাইবার অপরাধীরা। গোটা ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরবর্তী কালে তিনটি একাউন্ট ব্লক করে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৬ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা সুকুমারবাবুর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাকি টাকার হদিশ পেতে তদন্তে নামে আসানসোল সাইবার থানা। সেই তদন্তে পুলিশ ফোনের সূত্র ধরে প্রথমে হদিশ পায় রানিগঞ্জের বাসিন্দা চঞ্চল পালের। তাকে ধরে জেরা করে পুলিশ হাতে পায় সঞ্জয় মন্ডল ওরফে গণেশ ও অনিল শর্মার।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অফিসাররা জানতে পারেন যে, এই প্রতারণা চক্রের তেমন কিছু জানেন না, এমন ইনোসেন্ট লোকেদেরকে টাকার লোভ দেখিয়ে ব্যাঙ্কে একাউন্ট খোলা করাতো। তারপর সেই এটিএম কার্ডগুলো নিজেদের কাছে রেখে দিতো। বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম নিয়ে তারা ব্যাঙ্ক একাউন্ট আছে এমন লোকেদের ফোন করে ফাঁদে ফেলতো। তারপর তাদের টাকা নিজেদের একাউন্টে নিয়ে নিতো। সেই খবর চলে আসতো একাধিক এটিএম কার্ড থাকা আসানসোলের অনিল শর্মার কাছে। বেনামী সেইসব এটিএম কার্ড দিয়ে এরপর অনিল সেই টাকা তুলতো। পরে সেই টাকা সঞ্জয়ের হাত হয়ে চক্রের মুল পান্ডার কাছে চলে যেতো।
সাইবার থানার ঐ আধিকারিক বলেন, আমাদের লক্ষ্য চক্রের মুল পান্ডা পর্যন্ত পৌঁছে সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর হাতিয়ে নেওয়া বাকি টাকা উদ্ধার করা। তদন্ত জোরদার করা হচ্ছে।