KULTI-BARAKAR

আসানসোলের কুলটিতে বিজেপি কর্মীর অনশন তুললেন দলের দুই বিধায়ক ও জেলা সভাপতি

বেঙ্গল মিরর,  কুলটি ( আসানসোল), রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ লোকসভা ভোটের মুখে আসানসোলের কুলটিতে বিজেপির এক নেতা ও এক কর্মীর মধ্যেকার বিবাদ মেটাতে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলো সাংগঠনিক জেলা কমিটি। দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সেই বিবাদ মেটানোর দাবিতে গত ৬ দিন ধরে স্ত্রী সুনীতা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে অনশন করছিলেন বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিং। শনিবার বিকেলে সেই অনশন মঞ্চে আসেন আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটির দুই বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও ডাঃ অজয় পোদ্দার। তাদের সঙ্গে ছিলেন আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ রায়, সহসভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী।


এদিকে, এই অনশন চলাকালীন শুক্রবার অসুস্থ হয়ে যান সুনীতা দেবী। তাকে সঙ্গে সঙ্গে শাঁকতোড়িয়া হাসপাতালেন ভর্তি করা হয়েছে।
এদিন গোটা বিষয়টি নিয়ে অনশন মঞ্চে জেলা নেতৃত্ব ও দুই বিধায়ক পবনের সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেন। গোটা বিষয়টি দল গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলে আশ্বাস দিয়ে তাকে অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করেন। তারা পবন সিংকে ফলের রসও খাওয়ান। এরপর বিধায়ক চিকিৎসক ডাঃ অজয় পোদ্দার তাকে পরীক্ষা করেন বলে জানান প্রশান্ত চক্রবর্তী। তিনি তাকে অনশন তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। এরপর তাকেও শাঁকতোড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


প্রসঙ্গতঃ, এরই মধ্যে বিজেপি কর্মীর অনশন মেটাতে অনশন মঞ্চে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎই হাজির হয়েছিলেন বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়। বিজেপি নেতা তথা আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন কাউন্সিলার অভিজিৎ ওরফে বাপ্পা আচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে স্বস্ত্রীক ঐ বিজেপি কর্মী অনশনে বসেছেন গত ১৮ মার্চ থেকে ।
মেয়র ঐ বিজেপি কর্মীকে ফলের রস খাওয়ান ও অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন করেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কুলটির মতো জায়গায় বিজেপি কর্মীর অনশন মঞ্চে মেয়রের আসা রাজনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


তবে মেয়র দাবি করেছিলেন, একবারে মানবিকতার কারনে এই আসা। বলেছি তাদের সঙ্গে আছি। অনশন তুলে নিতে অনুরোধ করেছি।
জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের ১০৪ নং ওয়ার্ডের কুলটির শাঁকতোড়িয়ায় বাসিন্দা বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিং ঋণ নিয়ে নিজের বাড়ি তৈরী করছিলেন গত ২৯ জানুয়ারি। বিজেপি কর্মী পবন কুমার সিংয়ের স্ত্রী সুনীতা দেবীর অভিযোগ, বাড়ি তৈরীর জন্য তাঁদের কাছে স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রাক্তন কাউন্সিলার অভিজিৎ আচার্য্য ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। তার স্বামীকে অভিজিৎ আচার্য্য নিজের কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। সেখানে তার স্বামী গেলে তাকে মারধর করে। তারপর তাকেই পুলিশে অভিযোগ করে গ্রেফতার করায় বলে অভিযোগ।

সুনীতা দেবীর আরো অভিযোগ, এরপর তাদের বাড়ি ওই নেতার কথায় ভেঙে দেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনা ও তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতা অভিজিৎ আচার্য্য।
এরপর পবন কুমার সিং ও তার স্ত্রীকে নিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে অনশন মঞ্চ তৈরী করে অনশনে বসেছেন ন্যায় বিচারের দাবিতে। পবন কুমার সিংয়ের অভিযোগ ছিলো, তাদেরকে অভিজিৎ আচার্য্যর আশ্রিত দুষ্কৃতিরা হুমকি দিচ্ছে।
ঐ বিজেপি কর্মীর দাবি ছিলো, বিষয়টি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তারা কি ব্যবস্থা নেয় দেখি, তার পর তারা অনশন তুলবো। কারণ তিনি যেমন বিজেপি কর্মী। আর যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি বিজেপি নেতা! তাই বিষয়টি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব কি ব্যবস্থা নেয়, তা দেখা পর্যন্ত আগামী ২৩ মার্চ এই অনশন চালিয়ে যাবো।
এদিন ঐ কর্মী বলেন, যারা এসেছিলেন তারা আমাকে দলের তরফে ঐ নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমি তাতে আশাবাদী। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।


         তবে যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সেই বাপ্পা আচার্য বলেন, পবন সিংয়ে বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। ওর করা মামলায় আমি কলকাতার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছি। আর তৃণমুল কংগ্রেস সেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ঐ দলটা শেষের মুখে। এই সময় ঐ দলের ঐরকমই নাটক করতে এসেছিলেন। তার দাবি, এই এলাকার মানুষ জানেন যে, অভিজিৎ আচার্য্য সব জিনিসে রাজনীতি করে না।
এদিকে, এদিন বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই অভিযোগ আসার পর আমি জেলার দশজন নেতৃত্বকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করি। তাদের দিয়ে দুপক্ষের সাথে কথা বলে জেলার তরফে একটি তদন্ত রিপোর্ট রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছি। আমি নিজেও জেলা নেতৃত্ব ও দুই বিধায়ক সহ এদিন পবন সিংয়ের কাছে এসেছি। যে ঘটনা ঘটেছে, তা একবারেই অনভিপ্রেত। হওয়া উচিত ছিলোনা। আইন মেনে যা হওয়ার তা হবে। তবে দলও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দোষ করে থাকলে তার শাস্তি হবে।
রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, এই ঘটনা ঠিক করা হয়নি। তা যে বা যারা করে থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *