স্বপ্নাদেশে শুরু হয় চাপুই কালী মায়ের পুজো
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : গ্রাম থেকে কলেরার উপদ্রব ঠেকাতে, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের রীতি রেওয়াজ কে এখনো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, চাপুইয়ের মা কালীর পুজো হয়ে আসছে আড়ম্বরের সঙ্গে। মাথায় ধুনুচি নিয়ে, কেউ বা মঙ্গল কলস নিয়ে, মা কালীকে রানীগঞ্জের নিমচা কালী মায়ের মন্দির থেকে, নিয়ে এসেছেন চাপুইয়ের কালীমন্দিরে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে নানান বাদ্যযন্ত্র সহযোগে মাকে রুপোর সিংহাসনে চড়িয়ে, দিয়াসী নিয়ে আসছেন মায়ের মূর্তি। শিলা মুর্তি নানান অলংকারে সুসজ্জিত করে, ফুলে ফুলে মায়ের সর্বত্র ভরিয়ে তুলে, হাজারো ভক্ত মা কে বরণ করে নিয়েছেন চড়া রোদের প্রচন্ড দাবদাহকে উপেক্ষা করে।
কথিত আছে এখানে মা কালীর সাত বোনের, এক বোন এসে পৌঁছন কালী মন্দিরে, তারপর চলে দুদিন ধরে পূজা পর্ব। চৈত্র মাসের তৃতীয় মঙ্গলবারে মা এসে পৌঁছন মন্দির চত্বরে, আর মাকে নানাবিধ ফুলের সম্ভারে বরণ করে নেন হাজারো হাজার ভক্ত। যদিও এখানে মায়ের আসার আগেই এক সপ্তাহ পূর্বে, মাকে নিয়ে আসার জন্য নিমচা কালীবাড়িতে মাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, এর পরের মঙ্গলবারে মাকে নিয়ে আসা হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে। কথিত আছে একসময় কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়, মা কালী স্বপ্নাদেশ দেন, যে তাকে নিমচা কালীমন্দির থেকে নিয়ে এসে, চাপুই এলাকায় মন্দির করে, পূজা করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, আবার সুস্থ হয়ে উঠবে সকলে।
সে মতোই তৎকালীন সময়ে, আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে, মাকে গ্রামেরই শুরুতে, এক মন্দির করে পূজা করা হয়, আর তারপরেই মুহূর্তে মিলিয়ে যায়, সব অসুখ-বিসুখ। সে থেকেই নিয়ম করেই বংশপরম্পরায় এলাকার হাজারো মানুষ, রীতি মেনে মা কালীর পুজোতে শামিল হয়েছেন। এই পুজো উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী মেলা ও বসে। যদিও তার আগেই মায়ের আগমনের পরের দিনই মাকে আবার নিমচা কালীবাড়ি পৌঁছেও দেওয়া হয়। তবে মায়ের আগমনের পর সেই মেলা কিন্তু চলতেই থাকে। এবারও সেই মেলার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। মেলায় বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা নিয়ে, দোকানিরা এসে বসার সাথেই হাজারো হাজার ভক্তের জন্য পুজো কমিটির সদস্যরা, বিনামূল্যে কলকাতা দলের যাত্রাপালার আসর বসান মেলা চত্বরে। এবারও সেই কলকাতা দলের যাত্রা পালা পরিবেশিত হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে, যাকে ঘিরে দর্শকদের উন্মাদনা রয়েছে চরমে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত, যা নিয়ে শুধু চাপই এলাকায় নয়, আশেপাশের বেশ কিছু অংশের মানুষ এমনকি দূর দূরান্তে বিদেশে চলে যাওয়া ভক্তরাও মেলার এই কয়েকটা দিন, মা কালীর পুজোয় ব্রতী হতে হাজির হন চাপুই গ্রামে।