ASANSOL

রানীগঞ্জ থানার পুলিশ নিখোঁজ মহিলার খোঁজ করে তার পরিজনদের হাতে তুলে দিল

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ :  ফের একবার পুলিশ প্রশাসনের মানবিক মুখ লক্ষ্য করা গেল এক মহিলাকে উদ্ধারের বিষয় সামনে আসায়। এক সাবালিকা মহিলাকে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে উড়িষ্যার মিশনারি হোমে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার পরিবারের সদস্যদের সহায়তা করে নিখোঁজ মহিলার খোঁজ করে তার পরিবার পরিজনদের হাতে তুলে দিল আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের রানীগঞ্জ থানার পুলিশ। জানা যায় দীর্ঘ দু-বছর ধরে বাড়ি ছাড়া মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে  বাড়ির সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দিতে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে রানীগঞ্জ থানার পুলিশ। রানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর বিকাশ দত্তর নেতৃত্বে, দীর্ঘ দু’বছর, একমাস ধরে, নিখোঁজ থাকা মহিলা অবশেষে ফিরে পায় তার বাড়ির সদস্যদের। পুলিশের এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণে সম্ভবতই খুশি নিখোঁজ মহিলার পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর আগে উখরা বাজার এলাকার বাসিন্দা এক শিখ যুবকের সঙ্গে, প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে যুক্ত হয়ে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, রানীগঞ্জের  সিয়ারসোল, উপর রক্ষাকালী মন্দির পাড়া এলাকার বছর ২৮ এর মঞ্জু রুইদাস, পরবর্তীতে তাদের তিন সন্তান-সন্ততি হয়, এরপরই তার স্বামী সমগ্র পরিবার নিয়ে, পাঞ্জাবে নিজেদের দেশের বাড়ি চলে যায়, তিন বছর আগে মঞ্জু রুইদাসের স্বামী  আত্মহত্যা করলে, তার শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সদস্যরা, মঞ্জুকে তার দেশের বাড়ি, রানীগঞ্জে নানান ছল ছুতো করে, রেখে দিয়ে যায়। তবে পাঞ্জাবে রেখে দেয় তার তিন সন্তান-সন্ততিকে। এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মঞ্জু। অবস্থা এমনই বেগতিক হয়, যে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে শেকলে বেঁধে, বাড়িতে দরজা দিয়ে রাখতেন। এরপরই একদিন হঠাৎ করেই, মঞ্জু পাঞ্জাবের উদ্দেশ্যে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যদিও সে পাঞ্জাব যাওয়ার ট্রেনে না চেপে, উড়িষ্যা অভিমুখে যাওয়া ট্রেনে চেপে, মাঝ পথে কোথাও মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে উড়িষ্যার ঝারসুদ্ধা স্টেশনে, আহত অবস্থায় এসে পৌঁছয়। সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলার পরিবারের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে, তাকে উড়িষ্যার পুলিশ প্রশাসন, মিশন আশ্রয় নামে এক মিশনারী হোমে পাঠিয়ে দেয়।

গত এক মাস হল তার মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসায়, ধীরে ধীরে সে তার বাড়ির ঠিকানা বাড়ির সদস্যদের নাম ও অন্য সকল বিষয়, সেখানের আধিকারিকদের জানালে, তারা উড়িষ্যা পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে খবর দিলে, উড়িষ্যা পুলিশ রানীগঞ্জ থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে রানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর বিকাশ দত্তকে এ বিষয়ে খবর দিলে বিকাশ দত্ত এ বিষয়ে মানবিকতার খাতিরে ওই মহিলার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে আনতে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। সোমবার তাকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় রানীগঞ্জ এলাকায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। এদিন ওই মহিলার নিজের বাপের বাড়ির, দিদি, জামাইবাবু রা তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেও, তার জেড়তোতো দাদা, বৌদি তাকে সাদরে নিজের মেয়ের মত করে ফিরিয়ে নিয়ে যান। পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার প্রাপ্তির বিষয়ে লিখিতভাবে জানান দিয়ে, পুলিশকে এই বিশেষ সহায়তার জন্য সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলা,যে বর্তমানে সাধারণ জীবন যাপন করছে, সে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে আত্মহারা ।সে ওই পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেয়ে স্বভাবতই  খুশি। ওই মহিলা পুলিশ প্রশাসনকে এই বিশেষভাবে উদ্ধারের জন্য, সাধুবাদ জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *