BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

চিত্তরঞ্জনে দুটি ” পকেট গেট ” বন্ধ করার নোটিশ কারখানা কতৃপক্ষের, সিদ্ধান্ত কার্যকর না করতে লেবার ইউনিয়নের চিঠি

বেঙ্গল মিরর, চিত্তরঞ্জন, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ  আসানসোল লোকসভা নির্বাচন শেষ হতেই চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা বা সিএলডব্লু কর্তৃপক্ষ আবারও রেল এলাকায় ” পকেট গেট ” বন্ধ করা নিয়ে নোটিশ জারি করলো। সেই নোটিশে বলা হয়েছে চিত্তরঞ্জন সীমানায় নামোকেশিয়া পকেট গেট এবং লোয়ারকেশিয়া সংলগ্ন রামকৃষ্ণ পাঠচক্র পকেট গেট দুটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই নোটিশে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬ মে বৃহস্পতিবার পাঠচক্র পকেট গেট ও ১৭ মে শুক্রবার নামোকেশিয়া পকেট গেট বন্ধ হবে। এরজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থাও করছে রেল। এই নোটিশের কথা মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় গ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও শহরের ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন। তারপর থেকে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে ।


উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পকেট গেট দুটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেছিল রেল। কিন্তু সে সময় নামোকেশিয়া, কল্যাণগ্রাম, জিতপুর, প্রান্তপল্লী সহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন। তারা চিত্তরঞ্জন শহরে প্রবেশের জন্য ৩ নম্বর গেট বন্ধ করার হুমকি দেন। পাশাপাশি তার ভোট বয়কট করার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে জানিয়ে দেন। ‌এরপর পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়। জেলা প্রশাসন রেলের সাথে কথা বলে সেই সময় পকেট গেট দুটি বন্ধ করা থেকে তাদের বিরত করেন। ‌
কিন্তু এবার ভোট মিটতেই আবার গেট দুটি চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কতৃপক্ষ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ায় নামোকেশিয়া সহ পার্শ্ববর্তী কলোনি ও গ্রামীণ এলাকার মানুষজনেরা এককাট্টা হয়েছেন। এই গেট দুটি বন্ধ করতে এলে চরম বিরোধিতা করা হবে বলে তারা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সালানপুর ব্লক প্রশাসনের তরফে বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা ভেবে আগেই জেলাশাসক উদ্যোগী হয়েছিলেন। এবারও তিনি বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ স্তরে জানাবেন বলে জানান।


অন্যদিকে সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অমিত কুমার হাটি ঐ এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ে নজর রাখছেন বলে জানা গেছে।
চিত্তরঞ্জন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ ইসমাইল আলি বলেন, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কতৃপক্ষ  বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে পকেট গেট সম্পূর্ণ বন্ধ না করে বাইক চলাচলের উপযুক্ত ব্যবস্থা যাতে রাখা হয় সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সালানপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বিজয় সিং বলেন, দ্রুত উপযুক্ত জায়গায় আলোচনা করে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা আমরা দেখছি। তবে স্থানীয় একটা মহল মনে করছে  রেলের এলাকার বাইরের বিশাল সংখ্যায় মানুষদেরকে অসুবিধায় ফেলে পকেট গেট দুটি বন্ধ করতে গেলে ব্যাপক গোলমাল ছড়িয়ে পড়বে। চিত্তরঞ্জন রেল শহরে বাইরে থেকে গাড়ি ঢোকা বা বের হওয়া বন্ধ করার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত হবে ৩ নম্বর গেট এলাকায়। ‌সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে এই এলাকায় সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।


        এদিকে, বুধবার চিত্তরঞ্জন শহরের পকেট গেট দুটি বন্ধ না করার আবেদন জানিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিল সিএলডব্লু লেবার ইউনিয়ন। এদিন ইউনিয়নের পক্ষে রাজীব গুপ্ত এবং অন্যান্যরা ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের হাতে এই চিঠি তুলে দেন। ‌সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিটুর সাধারণ সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী ও চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জেনারেল ম্যানেজারের কাছে। তবে পরিস্থিতি যা তাতে বৃহস্পতিবার রামকৃষ্ণ পাঠচক্র পকেট গেট ও শুক্রবার নামোকেশিয়া পকেট গেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষ অনড় বলে জানা যাচ্ছে।


লেবার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চিঠিতে বলা হয়েছে, এখনই এই গেট দুটি বন্ধ না করে যাতে চিত্তরঞ্জন শহরে প্রবেশ প্রস্থানের জন্য আরও দুটি নতুন গেট তৈরি করা হয়। ‌এখন চিত্তরঞ্জন শহরে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য ১, ২ এবং ৩ নম্বর গেট আছে। লেবার ইউনিয়ন দাবি করে জানিয়েছে  ১৯৪৭ সালের পরিকল্পনা কিছুটা হেরফের করে উপযুক্ত জায়গায় নতুন করে ৪ ও ৫ নম্বর গেট তৈরি করা হোক। এই নতুন গেট যতদিন না তৈরি হচ্ছে ততদিন রামকৃষ্ণ পাঠচক্র এবং নামোকেশিয়া পকেট গেট দুটি দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল সহ অন্য যানবাহন  যাতায়াতের জন্য খুলে রাখা হোক।
এখন দেখার রেল ইঞ্জিন কারখানা কতৃপক্ষ কি সিদ্ধান্ত নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *