ASANSOL

আসানসোল আদালতে ১১ বছর পরে দোষী সাব্যস্ত তিন অভিযুক্ত, সালানপুরে লিচু ভর্তি ট্রাক হাইজ্যাকের ঘটনা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ পশ্চিমবঙ্গের মালদা থেকে ধানবাদ যাওয়ার পথে ৮৪ হাজার লিচু সহ একটি ট্রাক আসানসোলের সালানপুর থানার মেলেকোলার কাছে হাইজ্যাক বা ছিনতাই করার ঘটনা ঘটেছিলো। সেই ঘটনায় ধরা পড়া পাঁচ অভিযুক্তর মধ্যে তিন জনকে মামলা চলার ১১ বছর পর দোষী সাব্যস্ত করল আসানসোল জেলা আদালত। বৃহস্পতিবার এই তিনজনকে আদালত থেকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বিচারক আগামী ১৩ জুন তিন অভিযুক্তর  শাস্তি ঘোষণা করবেন বলে এই মামলার দায়িত্বে থাকা প্রধান সরকারি আইনজীবী বা পিপি স্বরাজ ওরফে বাচ্চু চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৩ মে ভোর চারটে নাগাদ ৮৪ হাজার লিচু নিয়ে মালদা থেকে ধানবাদ যাচ্ছিলো একটি ট্রাক। সেই ট্রাকে সামনে এসে পথ আটকায় একটি গাড়ি ও মোটরবাইক। সেই গাড়ি ও বাইকের আরোহীরা ট্রাকের চালক ও খালাসিকে মারধর করে তাদের মোবাইল, টাকা সহ সব কিছু নিয়ে দুষ্কৃতিরা ট্রাকটি ছিনতাই করে পালায়। বিষয়টি ট্রাকের চালক ও খালাসি প্রথমে কাছাকাছি থাকা কুলটি থানার চৌরঙ্গী ফাঁড়িতে জানান। কিন্তু ঘটনাস্থল সালানপুর থানার অন্তর্গত হওয়ায় চৌরঙ্গী ফাঁড়ি থেকে সালানপুর থানায় বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে চৌরঙ্গী ফাঁড়ির পুলিশ হাইজ্যাকের ঘটনাটি আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও আরটি মেসেজ করে পাঠিয়ে দেন। সেদিনই সালানপুর থানাতে ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক ধারায় এফআইআর রুজু হয়।

সালানপুর থানার তদানীন্তন সাব ইন্সপেক্টর বা এসআই প্রসেনজিৎ রায় তদন্তে নেমে জানতে পারেন ‌দুষ্কৃতিরা ট্রাকটিকে পুরুলিয়ার মফস্বল থানার ছররা এলাকাতে নিয়ে গেছে। সেই খবর পেয়ে পুরুলিয়া পুলিশ সেখানে ট্রাকটি আটক করে। প্রসেনজিৎবাবু সেখানে ছুটে যান। তিনি লিচুর ট্রাক সহ তিন দুষ্কৃতিকে সালানপুরে নিয়ে আসেন। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে ট্রাকের চালক ও খালাসি ধৃত দুষ্কৃতিদের টিআই প্যারেডের মাধ্যমে শনাক্ত করেন। এদিকে, ধৃত তিন দুষ্কৃতিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সালানপুর পুলিশ জানতে পারে যে অমিত রাউত, রামকুমার সাউ, অজয় রাম ছাড়াও এই অপহরণ কাণ্ডে ঘনশ্যাম যাদব ও সতীশ মাহাতো ওরফে বিট্টু জড়িত ছিল। পুলিশ তাদেরও গ্রেফতার করে।

এদিকে ধৃত ৫ জনের কাস্টডি ট্রায়াল হয়। সে সময় মামলা চলেছিল প্রায় দেড় বছর। তারপর এরা জামিনে মুক্ত ছিল। সেই মামলায় ধৃতদের মধ্যে পুরুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে গ্রেফতার হওয়া বাকি দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত হওয়া তিনজনের জামিন নাকচ করে আসানসোল জেলে পাঠানো হয়।

আগামী ১৩ জুন তাদের শাস্তি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ঐ সময় বাজেয়াপ্ত করা লিচু মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো ।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় জড়িত অজয় রামের বাড়ি চিত্তরঞ্জনে, সতীশ ওরফে বিট্টু ও ঘনশ্যামের বাড়ি হিন্দুস্তান কেবলস জোড়বাড়ি এলাকায়। অমিত সাউয়ের বাড়ি রূপনারায়ণপুর সামডি রোড এলাকায় ও রামকুমার সাউয়ের বাড়ি কুলটিতে।
প্রসঙ্গতঃ, এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও প্রসেনজিৎ রায় বর্তমানে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বা ওসির দায়িত্বে আছেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *