রানিগঞ্জে ডাকাতির ঘটনা ঝাড়খণ্ড থেকে ধৃতর ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ এক ঘন্টার ব্যবধানে রবিবার প্রথমে রানিগঞ্জে সোনার দোকানে ডাকাতি ও আসানসোলে গুলি চালিয়ে চারচাকা গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় শোরগোল পড়েছিলো। সেই ঘটনার পরে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে পাশের দুই রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছিলো। সেই মতো রবিবার রাতে ঝাড়খণ্ডের গিরিডি পুলিশ অভিযান চালিয়ে সরিয়া এলাকার জঙ্গল থেকে ক্রেটা গাড়ি আটক করে। সেই গাড়ি থেকে পাওয়া যায় সুরজ কুমার সিং নামে এক যুবক। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, এই সুরজ সিং আসানসোল ও রানিগঞ্জের দুটি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। গাড়ি থেকে পাওয়া যায় বেশ কিছু সোনার গয়না। গোটা বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে জানানো হয়। রাতেই আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের একটি দল গিরিডি চলে যায়।




সোমবার সকালে বিহারের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বছর ২৬ র সুরজ কুমার সিংকে এনে আসানসোলে আদালতে তোলা হয়। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের তরফে তাকে ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়া আবেদন করা হয়েছিলো। আদালতের সরকারি আইনজীবী বা পিপি মনোজ সিনহা বলেন, আসানসোলের মহিশীলা কলোনিতে গুলি করে গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ধৃতর বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৭, ৩৯৪ ও ৩৯৭ নং ধারা ও অস্ত্র আইনের ২৫/২৭ নং ধারায় মামলা করা হয়েছে। বিচারক তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দেন।
এই গ্রেফতার প্রসঙ্গে গিরিডি পুলিশের এসপি দীপক কুমার শর্মা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে রবিবার দুপুরে আমাদেরকে বলা হয়েছিলো যে রানিগঞ্জ একটা সোনার দোকানে ডাকাতি ও পরে আসানসোলে গুলি করে গাড়ি ছিনতাই করা হয়েছে। সেই মতো আমরা এ্যালার্ট হয়ে যাই। নাকা চেকিং করে তল্লাশি শুরু হয়। তাতেই গিরিডির সরিয়ার জঙ্গল থেকে তাড়া করে আমরা একটা চারচাকা গাড়ি ধরি। তাতে সুরজ কুমার সিং নামে এক যুবক ছিলো। তার বাড়ি বিহারে। গাড়ি থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড কার্তুজ পাওয়া গেছে। ঐ যুবকের সঙ্গে আরো চারজন ছিলো বলে তিনি জানান। কিন্তু তারা পালিয়ে যায়। হাজারিবাগ থেকে ডগ স্কোয়াড এনে জঙ্গল ও তার আশপাশের এলাকায় তল্লাশি করা হয়েছে। কিন্তু আর কাউকে পাওয়া যায় নি।
জানা গেছে, আসানসোল থেকে ঝাড়খণ্ড পুলিশকে যে গাড়ির নম্বর দেওয়া হয়েছিলো, তা ধরেই পুলিশ পিছু ধাওয়া করছিলো। কিন্তু বারবার রাস্তা বদল করায় পুলিশ গাড়িকে ধরতে পারছিলো না। কিন্তু চারচাকা গাড়িতে জিপিএস চালু থাকায় গিরিডি পুলিশের তরফে সেটি চিহ্নিত করে ধরতে সমস্যা হয়নি।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতর টিআই প্যারেড করা হবে। যাতে তার সনাক্তকরণ করা যায় যে, সে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলো। জানা গেছে, পরবর্তী কালে রানিগঞ্জে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ধৃতকে আলাদা করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে। কেন না, ঐ ঘটনায় রানিগঞ্জ থানার পুলিশ আলাদা করে একটি মামলা দায়ের করেছে।
প্রসঙ্গতঃ, রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রানিগঞ্জ শহরের ৬০ নং জাতীয় সড়ক বা এনএসবি রোডে তারবাংলা এলাকায় নামী একটি গয়না কোম্পানির সোনার দোকানে ৭/৮ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল হানা দেয়। মিনিট পাঁচেক মতো তারা দোকানে ছিলো। তার মধ্যে তারা কয়েক কোটি টাকার সোনার গয়না লুঠ করে। কিন্তু পালানোর সময় বিপত্তি ঘটে। সেই দোকানের সামনে অন্য একটি দোকানে ছিলেন আসানসোলের জামুড়িয়া থানা শ্রীপুর ফাঁড়ির আইসি মেঘনাদ মন্ডল।
তিনি ঘটনার কথা জানতে পেরে, নিরাপদ দূরত্ব থেকে ডাকাতদলকে গুলি চালাতে শুরু করেন। ততক্ষণে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ এলাকায় আসে। একটি গুলি এক ডাকাতের পেছনে লাগে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তা দেখা যায়। কিন্তু তারই মধ্যে ডাকাত দল সোনার দোকানের সামনে একটি মোটরবাইক ফেলে রেখে, অন্য বাইককে করে চম্পট দেয়। এদিকে এই ঘটনার এক ঘন্টা পরে আসানসোলের মহিশীলা কলোনির চক্রবর্তী মোড়ে চার দূষ্কৃতি দূর্গাপুরের বাসিন্দা নয়ন দত্ত নামে এক যুবককে গুলি করে তার চারচাকা ক্রেটা গাড়ি ছিনতাই করে পালায়। সবকিছু দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, আসানসোলের এই ঘটনার সঙ্গে রানিগঞ্জের ডাকাত দল রয়েছে। এরপর সব থানাকে এ্যালার্ট করা হয়। সেই খবর পেয়ে প্রথমে তোপচাচি পুলিশ সেই গাড়িকে ধরার চেষ্টা করেছিল। তারা না পাওয়ায় গিরিডি পুলিশের বিশাল টিম নিয়ে তল্লাশি শুরু করে। ডুমড়ি টোল প্লাজার কাছে গাড়িকে ধরার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা হয়নি। সেখানে একটা গেটকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে সরিয়া বাজারের দিকে সেই গাড়ি চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সরিয়া কয়রাডি এলাকায় জঙ্গলে ধরা পড়ে যায় গাড়িটি।
সোমবার ঘটনা নিয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বলেন, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।