দূর্গাপুরে শুরু হওয়া নাটকের অবসান আসানসোলে
পোষ্ট অফিসের কর্মীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে
বেঙ্গল মিরর, দূর্গাপুর ও আসানসোল, চরন মুখার্জি, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ শুরু হয়েছিলো ” অপহরণ” করা হয়েছে এমন অভিযোগকে সামনে রেখে। কিন্তু ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই তা একেবারে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলো অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তকে ধরতে আসার ঘটনায়। গোটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছে যোগী রাজ্য বা উত্তরপ্রদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে। আরো অভিযোগ যে, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা পুলিশ কর্মীরা সাদা পোষাকে ছিলেন ও তারা এই ব্যাপারে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশকে আগাম কিছু জানায়নি। তবে, যোগী রাজ্যের পুলিশ গোপনীয়তার কারণে সাদা পোষাকে থাকার বললেও, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশকে আগাম জানানোর অভিযোগ মানতে চায়নি। তবে, যাই হোক না কেন, দূর্গাপুর থেকে শুরু হওয়া নাটকের অবসান হলো আসানসোলে।




এদিকে, যাকে তুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে এতো কিছু, সেই যুবকের নাম মাখনলাল মিনা। তার বাড়ি রাজস্থানে। তিনি দূর্গাপুরের সিটি সেন্টার পোস্ট অফিসের কর্মী।
জানা গেছে, দুর্গাপুরের নবওয়ারিয়াতে বছর পাঁচেক ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন মাখনলাল মিনা। মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে সিটি সেন্টার পোস্ট অফিসের কর্মী মাখনলাল মিনা অন্যান্য দিনের মত মোটরবাইক নিয়ে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় একটি ইনোভা গাড়ি তার বাইকে এসে ধাক্কা মারে। সেই ধাক্কায় মাখনলাল মিনা পড়ে যান।এরপরে ঐ গাড়ি থেকে তিনজন নেমে আসে। অভিযোগ, তারা মাখননাল মিনাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে ১৯ নং জাতীয় সড়ক ধরে আসানসোলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সেই সময় এলাকায় থাকা কয়েকজন বাসিন্দা গোটা ঘটনাটি দেখে সিটি সেন্টার ডিএমসি মোড়ে ট্রাফিক গার্ড অফিসে খবর দেন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুর থানার পুলিশ আসানসোলের বিভিন্ন থানার পুলিশকে গোটা ঘটনার কথা জানায়। গোটা আসানসোল জুড়ে শুরু হয় নাকা চেকিং। তাতে ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর ফাঁড়ি এলাকার নাকা চেকিং ধরা পড়ে সেই ইনোভা গাড়ি। ততক্ষনে দুর্গাপুর থেকে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি সুবীর রায় ও দূর্গাপুর থানার ওসি প্রসেনজিৎ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পৌঁছে যায় আসানসোলে। কন্যাপুরের উদ্দেশ্যে। বেশ কিছুক্ষন পরে থেকে ইনোভা গাড়ি সহ মাখনলাল মিনা ও নিজেদেরকে উত্তরপ্রদেশের আগ্রার থানার পুলিশ পরিচয় দেওয়া একজন এএসআই ও দুই কনস্টেবলকেও নিয়ে আসা হয় দুর্গাপুর থানায়।
উত্তরপ্রদেশ থাকা আসা এক পুলিশ কর্মী বলেন, মাখনলাল মিনা একটি অপরাধমুলক মামলার সাথে জড়িত আছে। তার খোঁজ চালানো হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। পরে আমরা খবর পাই যে, যে পশ্চিমবঙ্গের দূর্গাপুরে আছে। সেই মতো তিন দিন আগে আমরা একটি গাড়িতে দুর্গাপুরে আসি। এদিন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উত্তরপ্রদেশের আগ্রার থানায়। কিন্তু এইভাবে স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে ও সাদা পোষাকে তারা এই কাজ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঐ পুলিশ অফিসার বলেন, আমাদের রাজ্যের পুলিশের তরফে এই রাজ্যের পুলিশকে আগেই জানানো আছে। আর সাদা পোষাক নিয়ে তার দাবি, ঐ অভিযুক্ত যাতে চিনতে না পারে, তাই তারা সিভিল ড্রেসে ছিলেন। এদিকে, মাখনলাল মিনা সহ চারজনকে দুর্গাপুর থানায় দীর্ঘক্ষন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে এই প্রসঙ্গে এসিপি (দুর্গাপুর) সুবীর রায় বলেন, দূর্গাপুর থেকে যে ব্যক্তিকে তিনজন নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা উত্তরপ্রদেশের সাহারান থানার পুলিশ কর্মী। তাদের কাছে পরিচয়পত্র আছে। আমরা আগ্রা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু জেনে নিয়েছি। মামলার নথি ও সেখানকার আদালতের নির্দেশ আছে। তবে অভিযুক্তকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল। তাই ভুল বোঝাবুঝির একটা ঘটনা ঘটলো। এখন আইন মেনে যা যা করা তাই করা হবে।