ASANSOL

আসানসোল শহরে পার্কিং জোনের নামে চলছে যথেচ্ছাচার, পুরনিগমের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে চলছে বেআইনি কাজ, অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর,আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য , সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায় :  দিন কয়েক আগে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা ও পুরনিগমের চেয়ারম্যান, মেয়র ও সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে নবান্নে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, বহু পুরসভায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। অথচ সেগুলো ঠিকঠাক চলে না বলে আমার কাছে খবর আছে। পার্কিং জোন থেকে ফি বাবদ পাওয়ার টাকা সবটা সরকারি দপ্তরে জমাও পড়ে না।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ক্ষোভ কতটা যে সত্যি তা আসানসোল পুরনিগমের আওতায় থাকা পার্কিং জোন থেকেই বোঝা যায়। পুর এলাকার বাসিন্দা থেকে পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র সবাই এই বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছেন।


আসানসোল শহর বা পুর এলাকায় অনেক মানুষ প্রতিদিন কোন না কোন কাজে আসেন দুই চাকা চারচাকা গাড়ি নিয়ে। তাদের গাড়ি নির্দিষ্ট জায়গায়  পার্কিং করে রাখার জন্য ফি বাবদ টাকা দেন। অভিযোগ, সেই ফি কোথাও ১০ টাকা, কোথাও ২০  টাকা, কোথাও আবার আরো বেশি। কিন্তু পার্কিং জোন থেকে ফি আদায় হওয়া এই টাকার বেশিরভাগই আসানসোল পুরনিগমের কোষাগারে জমা পড়ছে না বলে অভিযোগ। কেননা, এই মুহুর্তে আসানসোল পুরনিগম চালিত পার্কিং জোনের একটা বড় অংশই অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে, যেখানে এই পার্কিং জোন গুলি আছে সেটি শহরের জিটি রোড লাগোয়া। যে কারণে জিটি রোডের পাশে থাকা পথচারীদের চলার ফুটপাতের জায়গা দখল করে নিয়েছে এইসব পার্কিং জোন চালানোর দায়িত্বে থাকা লোকেদের একাংশ। এরজন্য যদি জিটি রোডে কোন কারণে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তার পেছনে গাড়ি ও বাসের লম্বা লাইন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অনেক পার্কিং জোনের মধ্যে বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান ও গুমটি। অভিযোগ, এইসব দোকান ও গুমটি থেকে প্রতি মাসে মোটা টাকা নেওয়া হয়।


দিনের বেলায় একদিকে এই ধরনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ পার্কিং জোন চলে। আর রাতে এইসব পার্কিং জোনে বাজারে আসা বড় বড় ট্রাক গুলি দখল করে নেয়। এরফলে আসানসোলের বিএনআর থেকে যদি কেউ উষাগ্রামের দিকে যেতে চান কিংবা উষাগ্রাম থেকে বিএনআরের দিকে আসতে চান তাহলে তাকে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হবে।

সাধারণ মানুষদের অভিযোগ, পুরনিগম থেকে দূরে  গাড়ি রাখতে গিয়ে দেখা যায়, পুরনিগমের পার্কিং জোন নয় অথচ ফিয়ের নামে টাকা দিতে হচ্ছে। কোন রসিদ বা টোকেন দেওয়া হয়না। গোটা বিষয়টা তিনি পুরনিগমের এক কাউন্সিলরের নজরেও আনা হয়েছিলো।
আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বর্তমানে পার্কিং জোনের বিষয়টি দেখেন। এই প্রসঙ্গে ওয়াসিমুল হক বলেন, আসানসোলে মোট ৩৬ টি পার্কিং জোনের জায়গা আছে। এরমধ্যে বেশ কিছুদিন আগে ১২ টি মতো পার্কিং জোনের টেন্ডার করেছিলাম। তার মধ্যে ৬ টি পার্কিং জোনের দায়িত্ব পাওয়া ৬ জন টাকা জমা দিয়ে পার্কিং জোনের তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাকিরা নেননি। আমাদের মনে হচ্ছে যে হয়তো যে রেট হওয়া উচিত ছিল তার থেকে বেশি হয়ে যেতে পারে। সেই জন্য আবার নতুন করে আরো বেশি পার্কিং জোনের টেন্ডার কয়েকদিনের মধ্যে করতে যাচ্ছি। ডেপুটি মেয়রের এই কথায় একটা জিনিস পরিষ্কার, এদিন পর্যন্ত বেশিরভাগ পার্কিং জোনের টেন্ডার হয়নি। পুরনিগমের চোখের সামনে বহিরাগতরা সেইসব পার্কিং জোন থেকে ফি” র নামে টাকা তুলছে। এমন হতে পারে যে, সেই টাকা পুরনিগমে জমা পড়ে না। ডেপুটি মেয়র অবশ্য বলেন, এই নিয়ে মেয়র নতুন করে একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, শহরের কোন কোন জায়গায় পুরনিগমের পার্কিংয়ের নামে কেউ কেউ টাকা তুলছে। মেয়র এই জন্য বিভাগে যারা এই দায়িত্বে আছেন তাদেরকে সাত দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট দিতেও বলেছেন। এর আগে কিভাবে পার্কিং জোন কত টাকা আসতো তাও রিপোর্টে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাম আমল থেকেই পার্কিং জোন নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।


আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, আমার সময় এইরকম খারাপ অবস্থা ছিল না। আমি মেয়র পদ ছাড়ার পরে বারবার বলেছি ২০২০ ডিসেম্বরের পর থেকে পার্কিং জোন নিয়ে যারা লক্ষ লক্ষ টাকা জমা দেননি, তাদের নামে এফআইআর করা হোক। আজ পর্যন্ত একজনের ক্ষেত্রেও পুরনিগম এফআইআর করেনি। শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় অনৈতিক কাজ তো হবেই। তার দাবি, এই বিষয়ে অবশ্যই উচ্চপর্যয়ের তদন্ত হওয়া উচিত। তাতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তাকে শাস্তি দিতে হবে।
পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর গোলাম সরবর বলেন, এই পার্কিং জোন নিয়ে আমরা বারবার অভিযোগ তুলেছি। কিন্তু কোন কাজ করা হচ্ছে না।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, আসানসোলের ডেপুটি মেয়র যা বলছেন ও মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা একে অপরের বিরোধিতা মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো বলেছেন, পুরসভাগুলোতে কাট মানি ছাড়া কোন কাজই হয় না। সবচেয়ে বড় কথা আসানসোলের মানুষেরা জানেন রাস্তাকে প্রায় দখল করে পার্কিং জোনের নামে যে যেখানে পারছে টাকা তুলছে। সেটা পুরনিগমের মেয়র বা তার আধিকারিকরা জানেন না এটা হতে পারে? সবাই সবকিছু জানেন। তাই বলছি,  ঠিকমতো তদন্ত হলেই সব বেরিয়ে আসবে ।
তাই সবার দাবি, সত্যিকারের আসানসোলের পার্কিংয়ের চেহারাটা কি, তা জানতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য স্তরের উচ্চ পদস্থ পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকরা কমিটি করে তদন্তে নামুন। তাহলে তারা দেখবেন, গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা পার্কিং জোনের নামে তছরুপ হয়েছে। যা পুরনিগমে জমা পড়েনি। নিজেদের ন্যায্য টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে রাজ্য সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *