ASANSOL

কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংকে ১৪ দিনের হেফাজতে পেলো সিআইডি, আসানসোল আদালতে দীর্ঘ সওয়াল-জবাব

রানিগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা

বেঙ্গল মিরর,  আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ  দীর্ঘ টালবাহানার শেষে দুবছর আগে রানিগঞ্জে হওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংকে বুধবার ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে পেলো রাজ্য পুলিশের সিআইডি। এদিন বিকেলে চারটের পরে আসানসোল জেলা আদালতে সিজেএম বা মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ( ভারপ্রাপ্ত) অমৃতা বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে সওয়াল-জবাব শুরু হয়। সরকারি আইন বা পিপি মনোজ কুমার সিনহা সিআইডির হয়ে সুবোধ সিংকে সিআইডির হয়ে এই ঘটনায় আরো তদন্তের জন্য ১৪ দিনের হেফাজতে ( পিসি) নেওয়ার আবেদন করেন।

সুবোধ সিংয়ের দুই আইনজীবী শেখর কুন্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ তাদের মক্কেলকে বিহারের বেউর জেল থেকে এই ঘটনা আসানসোলে আনা থেকে রিমান্ডে চাওয়া সহ একাধিক পয়েন্টে সওয়াল করে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা সিআইডির ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদনের বিরোধিতাও করেন। শেখরবাবু বলেন, যদি সুবোধ সিংকে সিআইডির হেফাজতে দেওয়া, তাহলে জেরার সময় যেন গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফী এবং অডিও রেকর্ডিং করা হয়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে দুপক্ষের সওয়াল-জবাবের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হয়।

সুবোধ সিংয়ের দুই আইনজীবী বিভিন্ন ধারার উল্লেখ করে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও সরকারি আইনজীবী তা মানতে চাননি। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রায় দান স্থগিত রাখেন। এক ঘন্টা পরে সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ বিচারক আবেদনের ভিত্তিতে ১৪ দিন সিআইডি হেফাজত মঞ্জুর করেন।


এদিন রায়দানের পরে যখন সুবোধকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি সিআইডিকে কোন হুমকি দিইনি। তার দাবি, আমাকেই সিআইডির অফিসাররাই গুলি করার হুমকি দিয়েছেন। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ৬ বছর ধরে আমি জেলে আছি। যা প্রমাণ করার তা পুলিশকে করতে হবে। এর পাশাপাশি সে কলকাতার বিরিয়ানি ব্যবসায়ীকে বেউর জেল থেকে ফোনে হুমকি, মনীষ শুক্লাকে খুনের পরিকল্পনা ও ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংকে চেনার কথা অস্বীকার করেন।  


এদিন সকালে দুদিনের জেল হেফাজত শেষে  আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার থেকে এই গ্যাংস্টারকে আদালতে আনা হয়। তারজন্য  আসানসোল আদালতের একটা অংশকে কার্যত দূর্গে পরিনত করা হয়েছিলো। রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিলো। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার বা আইও দিগন্ত বিশ্বাস সহ রাজ্য পুলিশের সিআইডির ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার আদালতে এদিন উপস্থিত ছিলেন। বেলা বারোটা থেকে আদালতে এডিজে ( ২) শুভ্র বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে পেশ করা সুবোধ সিংকে। সিআইডির তদন্তে সরকারি আইনজীবী বা পিপি প্রশান্ত ঘোষ সুবোধকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন।

এরপর সওয়াল-জবাব শুরু হলে সুবোধের আইনজীবী এডিজে (২) র সিআরপিসির ১৬৭ নং ধারায় রিমান্ডের আবেদন শোনার এক্তিয়ার নেই বলে দাবি করেন। তারা বলেন, এই এজলাস সেশন জজের এজলাস। তিনি তা শুনতে পারেন না বা কোন নির্দেশ দিতে পারেন না। সরকারি আইনজীবীও তা মেনে নেন। পৌনে এক ঘন্টার মতো সওয়াল-জবাব হয়। শেষ পর্যন্ত দুপুরে এডিজে (২) মামলাটি সিজেএমের কাছে স্থানান্তরিত করে দেন। সেখানেই বিকেলের পরে নতুন করে মামলাটি শুরু হয়।


সন্ধ্যায় সুবোধের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ বলেন, সওয়াল-জবাব শেষে ম্যাজিস্ট্রেট ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। আমরা এর বিরোধীতা করার পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে আপত্তি করেছিলাম। পুরো অর্ডার কপি আমি দেখিনি। দেখার পরে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার থাকলে নেওয়া হবে বলে তিনি বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *