বৃষ্টির জলে এলাকা ডুবে যাওয়া আটকাতে পরিকল্পনা আসানসোল পুরনিগমের, সাফাইয়ের কাজ শুরু গাড়ুই নদীর
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোল গোটা বাংলা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ঐ বৃষ্টি শুরু হলে আসানসোল শহরের একাংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গাড়ুই নদীর জলস্তর বাড়বে। আর সেই জলস্তর বেড়ে আসানসোল রেলপার সহ আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হতে পারে। অতীতের মতোই বৃষ্টির সেই জল ঘরে ঘরে ঢোকার একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। গোটা এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বর্ষার মুখেই শুরু হলো গাড়ুই নদী সাফাইয়ের কাজ। যদিও মঙ্গলবার ও বুধবার দফায় দফায় বৃষ্টিতে নদীর কিছুটা হলেও জল বেড়েছে বলে জানা গেছে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন এই কাজ তো বর্ষার আগেই করা উচিত ছিল। বর্ষার সময়ে এই কাজ করলে সমস্যা তো বাড়বেই।




আসানসোল উত্তর বিধান সভার রেলপারের জাহাঙ্গির মহল্লা, ইকবাল সেতুর কাছে এই কাজ চলছে। এরপর হাজিনগর এবং তার আশপাশ হয়ে ১৯ নং জাতীয় সড়কের কালিপাহাড়িতে গিয়ে এই কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে। বিপুল পরিমাণ আবর্জনা নদী থেকে তুলে নদীর পাশে আপাততঃ এক জায়গায় রাখা হচ্ছে।
রেলপার এলাকার আসানসোল পুরনিগমের কংগ্রেসের কাউন্সিলর গোলাম সরবর বলেন, প্রতিবছর রেলপার এলাকায় বৃষ্টিতে গাড়ুই নদীর জল স্তর বেড়ে যায়। সেই জলে বিভিন্ন নিচু এলাকায় জল ঢুকে যায়। যার মধ্যে রামকৃষ্ণডাঙা ডাঙাল ,পাঞ্জাবি মহল্লা, তোরি মহল্লা ,হাজিনগর, জাহাঙ্গির মহল্লা, বাবুয়াতলা, মুতশুদ্ধি মহলা, নয়া মহল্লা ,কসাই মহল্লা। এইসব এলাকার কোন কোন বাড়ির একতলা পর্যন্ত জলে ডুবে যায়। ২০২১ সালে গাড়ুই নদীর জলে ডুবে যাওয়ার ছবি এইসব এলাকার বাসিন্দারা এখনো ভোলেনি।
আসানসোলের বিজেপি কাউন্সিলরদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, এত বড় একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অথচ আমাদের কোন মতামত নেওয়া হয় না। তার দাবি, এই কাজের ঠিক মতো তদন্ত হলে এখানেও দুর্নীতি পাওয়া যাবে ।
কল্যাণপুরের এক বাসিন্দা বলেন গাড়ুই নদী শহরের কল্যাণপুর ব্রিজ হয়ে গেছে। এই কল্যাণপুর ব্রিজের নিচেই প্রচুর পরিমাণ আবর্জনা এবং কচুরিপানা পড়ে থাকে। এটাও পরিষ্কার করার দরকার। তা না হলে একটু বৃষ্টি হলেই ওই সেতুর উপর দিয়ে জল বয়ে যায়।
এই গোটা এলাকার আসানসোল পুরনিগমের বোরো চেয়ারম্যান উৎপল সিনহা বলেন, গাড়ুই নদী সাফাই বা পরিষ্কার করার কাজ আমরা পুরোদমে শুরু করেছি। জাহাঙ্গীর মহল্লা, ইকবাল সেতু হয়ে এই কাজ শুরু হয়েছে। এরপর রামকৃষ্ণ ডাঙ্গালের কাছে এই কাজ হবে। সেখান থেকে ডিপোপাড়া, গোপালনগর হয়ে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত নদী সাফাইয়ের কাজটা হবে। এর আগেও কিন্তু এখানে এই ভাবেই কাজ আমরা করেছি । সমস্যাটা খুব গভীরে। তিনি আরো বলেন, এখানে প্রায় ৪০০ ছোট বড় কারখানা ও ব্যবসায়ী আছেন। তারা তাদের তৈরি করা অপ্রয়োজনীয় অব্যবহৃত জিনিসপত্র নদীতে ফেলে দেন। সকালে আমরা যখন সেগুলো পরিষ্কার করছি বিকেলে গিয়ে দেখছি আবার সেখানেই ফেলা হয়েছে। এই জন্য আমরা তাদের নোটিশ দিয়ে এই কাজ বন্ধ করার আবেদন করছি। এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওদের একটা করে বড় ব্যাগ দেবো। সেই ব্যাগের মধ্যে আবর্জনা ভরে আসানসোল পুরনিগমের ঠিক করে দেওয়া একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবেন।
বোরো চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাব। এখন নদী থেকে যে টন টন আবর্জনা বেরোচ্ছে সেগুলোও পাথর খাদানের ভরাটের জন্য গিয়ে ফেলে দেবো। এছাড়াও নদীর জমিতে দুপাশ জুড়ে যে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য সদ্য একটি বৈঠক করা হয়েছে। তাদের শীঘ্রই নোটিশ দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে । প্রয়োজনে সেই সব অবৈধ দখলদারদের ভাঙ্গা হবে।
এই প্রসঙ্গে মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, আমার নেতৃত্বে পুর কমিশনার, ডেপুটি মেয়র, বোরো চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সম্প্রতি করা হয়েছে। সেই এইসব বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই মতো গাড়ুই নদীকে সাফাই করার পাশাপাশি, গোটা প্রক্রিয়ার কাজ করা হচ্ছে। আশা করি, আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা।