ASANSOL

আসানসোলে ২০ দিন পরে এসে টিএমসিপির বিক্ষোভের মুখে উপাচার্য, হেনস্তার অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol News Updates ) টানা ২০ দিন আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তৃনমুল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি। আর সেই ২০ দিনের মাথায় সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চরম বিক্ষোভের ভাইস চ্যান্সেলার ( ভিসি) বা উপাচার্য ডাঃ দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়। পড়ুয়াদের আন্দোলন এতটাই চরমে পৌঁছায় যে, সাড়ে তিন ঘন্টা পরে দুপুর দেড়টা নাগাদ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হন। সেই সময়ও তার ঘিরে ” ভিসি গোব্যাক ” স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারী। তিনি যখন গাড়িতে উঠতে যান, তখন তার গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বেরোনোর সময় উপাচার্য সরাসরি টিএমসিপির কর্মীদের দিকে অভিযোগ আঙুল তুলে বলেন, আমার অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জলের লাইন কেটে দেওয়া। আমার টেবিল ও চেয়ারের সামনে বসে পড়া হয়। আমাকে শারীরিক ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাড়ে তিন ঘন্টার মতো ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার পেনশন সহ অন্য সবকিছুর কাগজে সইয়ের দরকার ছিল। রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশে সেই কাজ করতে এসেছিলাম। কিন্তু তা করতে পারিনি। আন্দোলনের নামে এমন কিছু করা হচ্ছিলো যে, বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম।


টিএমসিপির দাবি ও অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। এটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। এতদিন ধরে যা কাজ করেছি, তা সবটাই পড়ুয়াদের স্বার্থে। একেবারে আইন মেনে। আইনী খাতে খরচ প্রসঙ্গে তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় কোন মামলা করেনি। আমার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি নিয়োগ সংক্রান্তও মামলা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু হাইকোর্টে লড়াই করছে। আইন মেনে তা করতেই হবে। তার জন্য যা খরচ করার তা করা হয়েছে। তার দাবি, ঐ খরচের হিসেবে যে কেউ চাইলেই তে আমি দিতে পারিনা। ওটা কনফিডেনসিয়াল। এর হিসেব নিতে গেলে, তিনটে রাস্তার কথা আমি টিএমসিপির জেলা নেতৃত্বরা বলেছি। প্রথমটা আরটিআই করা। দ্বিতীয় হলো উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠি লেখা ও তৃতীয় হলো আমাকে চিঠি লেখা। তা আমি উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে পাঠাবো। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে আমি দিয়ে দেবো। আর উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব আমার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। তা দেওয়া হয়েছে। তা দেখে রাজ্য সরকার সন্তুষ্ট না হলে, তিন সদস্যের একটি দল পাঠানোর কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু ৬ মাস হলেও, তারা আসেননি। টিএমসিপির
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করা নিয়ে টিএমসিপির অভিযোগ প্রসঙ্গে ভিসি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো তা করছি। কোন বেআইনি কিছু করিনি। নতুন করে এই ব্যাপারে কোন কিছু নির্দেশ এলে, সেই মতো করবো।


এদিকে, এদিন ভিসির দাবি ও অভিযোগ মানতে চাননি ২০ দিন ধরে চলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া টিএমসিপির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমরা কাউকে কোন রকম ভাবে হেনস্তা করিনি। উনি মিথ্যে কথা বলছেন।মিথ্যে কথা বলার তিনি মাস্টার মাইন্ড। উনি এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলছেন। উনি তো রাজ্যপালের দালালি করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ছাত্র দরদী। কিন্তু ভিসি তো ছাত্র বিরোধী। উনার মতো ছাত্র বিরোধী মানুষ আগে কেউ দেখেননি। জেলা সভাপতির দাবি, ভিসিকে তো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার হিসেব দিতেই হবে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা নিজেদের আইনী খাতে খরচ করেছে, তাদের কাছ থেকে আদায় না করা পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। আর আমরা তো এই খরচ নিয়ে শ্বেত পত্র প্রকাশের দাবি করছি।


প্রসঙ্গতঃ প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটার পরে টিএমসিপির কর্মী পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভে বসে। কিন্তু তার আগে সাড়ে নটা নাগাদ এদিন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলে আসেন। তিনি নিজের অফিস খুলে বসেন। পরে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভিসির আসার কথা জানতে পারে। এরপর অভিনব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পড়ুয়ারা ভিসির অফিসে চলে যায়। সেখানে একাধিক বিষয় নিয়ে অভিনব মুখোপাধ্যায় সহ অন্য ছাত্র নেতাদের সঙ্গে ভিসির বাকবিতন্ডা হয়। একটা তারা ভিসির চেয়ারের সামনে বসে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন ভিসির নিরাপত্তা রক্ষী রাজ্য পুলিশেট এক কর্মী সেখানে বসতে মানা করেন। তা নিয়ে ঐ পুলিশ কর্মীকে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। গোটা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ঘন্টা দুয়েক ভিসির চেম্বারে এমন পরিস্থিতি থাকে। শেষ পর্যন্ত দুপুরে ভিসিকে নিরুপায় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *