ছিনতাইকারীর হাতে আক্রান্ত তৃনমুল কাউন্সিলারের স্বামী, পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পরপর দুটি ঘটনায় আতঙ্ক
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় এক ছিনতাইকারীর হাতে প্রকাশ্য রাস্তায় আক্রান্ত হলেন আসানসোল পুরনিগমের ৪৬ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার শিখা ঘটকের স্বামী গণেশ ঘটক। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের হটন রোডের অচলাবালা লেনে। ঠিক যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখান থেকে ১ মিনিটের রাস্তা হলো কাউন্সিলারের বাড়ি। পেশায় আসানসোল আদালতের আইনজীবী গণেশ ঘটক হটন রোড থেকে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় অচলাবালা লেনে একেবারে মাঝে এক ছিনতাইকারী তাকে ধরে। জানতে চাওয়া হয়, তার কাছে কি আছে? গণেশবাবুর কাছে ছোট কিপ্যাড বা ফিচার মোবাইল ফোন তেমন কিছু ছিলোনা। ছিনতাই করার মতো কিছু না পেয়ে ছিনতাইকারী তাকে আক্রমণ করে। তাকে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার আগে ছিনতাইকারী পাঞ্চ জাতীয় কোন অস্ত্র দিয়ে তার বাঁহাতের কনুইয়ের কাছে মারে। এরফলে তিনি গুরুতর জখম হন। ছিনতাইকারী সেখান থেকে চলে গেলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় কোনমতে বাড়িতে আসেন। কাউন্সিলার স্ত্রীকে সব ঘটনা তিনি বলেন। ঘটনার কথা শুনে আশপাশের লোকেরাও চলে আসেন। খবর দেওয়া হয় আসানসোল দক্ষিণ থানায়। জখম গণেশবাবু আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
এই ঘটনার ঠিক ১০/১৫ মিনিট পরে পাশের রাস্তা মাষ্টার পাড়ায় এক ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন আসানসোলের ইসমাইলের বিআরএমবি রোডের বাসিন্দা মুকুল চট্টোপাধ্যায়। জানা গেছে, তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাস্টার পাড়া হয়ে হেঁটে হটন রোডে স্বামী মিলন চট্টোপাধ্যায়ের ওষুধের দোকানে আসছিলেন। সেই সময় এক ছিনতাইকারী মাস্টার পাড়ার ভেতরে ধরে। তাকে প্রথমে ধাক্কা মারে ছিনতাইকারী। তাতে তিনি কিছুটা বেসামাল হয়ে গেলে, ছিনতাইকারী তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও হ্যান্ড ব্যাগ ছিনিয়ে পালায়। মুকুলদেবীর ব্যাগে ২১ হাজার টাকা ও বাড়ির চাবি ছিলো। এই ঘটনারও খবরও আসানসোল দক্ষিণ থানায় জানানো হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে পুলিশ এলাকায় আসে। প্রথমে পুলিশ কাউন্সিলারের বাড়িতে যায়। কাউন্সিলারের সঙ্গে পুলিশ ঘটনা নিয়ে কথা বলে। পরে পুলিশের দল অচলাবালা লেন ও মাষ্টার পাড়া ঘুরে দেখে। তবে ছিনতাইকারীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। কাউন্সিলার গোটা ঘটনার কথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়কে জানান।
ঘটনার কথা জানানো উল্টোদিকের ৪৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়কেও। উল্লেখ্য, এই ৪৮ নং ওয়ার্ডের সুমথপল্লীতে গত তিন সপ্তাহে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সবক্ষেত্রেই মোটরবাইক সওয়ার দূষ্কৃতিরা পথচলতি মহিলাদেরকে টার্গেট করে। তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দূষ্কৃতিরা। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিলো গত ২২ জুলাই সকালে। এলাকার বাসিন্দা বাচিক শিল্পী সোমা বিশ্বাসের মোবাইল ছিনতাই করা হয়। শেষ ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ আগষ্ট। ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন এলাকার বাসিন্দা মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়। এই দুটি ঘটনার মাঝে গত আরো দুটি ঘটনা।
এই চারটি ঘটনার অভিযোগ আসানসোল দক্ষিণ থানায় করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো পর্যন্ত কিছু করে উঠতে পারেনি। তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভরসন্ধ্যায় ঘটলো আরো দুটি ঘটনা।
সবকটি ঘটনাই ঘটেছে শহরের জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তায়। স্বাভাবিক ভাবেই এমন এলাকায় পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় দূষ্কৃতিদের বেপরোয়া মনোভাব প্রকাশ্যে চলে আসে। অন্যদিকে, এইসব এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, এইসব ঘটনা প্রমাণ করে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। দূষ্কৃতিরাজ চলছে।
আরো জানা গেছে, কাউন্সিলারের স্বামী আক্রান্ত হওয়ায় অচলাবালা লেনের বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর করে একটি ডেপুটেশন আসানসোল দক্ষিণ থানায় দেবেন।
এই প্রসঙ্গে কাউন্সিলার শিখা ঘটক বলেন, ভাবতেই পারছি না যে বাড়ির এতো কাছে এই ঘটনা ঘটেছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জকে সবকিছু বলেছি।
এদিকে, মেয়র ও মেয়র পারিষদ বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশকে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ জানায়, দুটি ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে।