ASANSOL

আসানসোলে জমিতে হাই টেনশন বিদ্যুতের খুঁটি বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ জমিতে হাই টেনশন বিদ্যুতের খুটি লাগানো হবে। আর সেই কারণেই বলপূর্বক জমি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ দেখালেন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিজেদেরকে ঐ জমির মালিক বলেও দাবি করেন। তারা হলেন জয়শ্রী বাউরি, পূষ্পা বাউরি, মানিক বাউরি, আদেশ বাউরি ও তপন বাউরি। তারা জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর কাজে বাধা দেন। মহিলারা জেসিবি মেশিনের সামনে বসে পড়েন।

খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় আসে। পুলিশ অফিসারেরা বিক্ষোভকারীদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়।  আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল আসানসোল দক্ষিণ থানার ( পিপি) অন্তর্গত ধেমোমেনের সাতাশাই মোড় সংলগ্ন কাঁকড়শোল এলাকায়। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনা দুপুর পর্যন্ত চলে। শেষ পর্যন্ত জমির মালিকেরা কিছু দিন সময় চাওয়ায় এদিনের মতো কাজ বন্ধ রাখা হয়।


জানা গেছে, আসানসোলের জিটি রোডের ধেমোমেনের কাঁকড়শোল এলাকায় রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে হাই টেনশন তার নিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তারজন্য সমীক্ষাও করা হয়েছে। সেই মতো শনিবার সকালে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে একটি সংস্থার লোকেরা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে হাই টেনশন বিদ্যুতের খুঁটি বসাতে আসেন। কিন্তু তাদেরকে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়েই এবং জমির মালিকদের কোনরকম অনুমতি ছাড়াই এদিন সকালে জোর করে বিদ্যুৎ দপ্তর সেখানে খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করতে গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ এবং সংশ্লিষ্ট জমির মালিক তথা মহিলাদের তীব্র বাধায় শেষ পর্যন্ত বিশাল বিশাল মেশিন নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরকে ফিরে যেতে হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পৌঁছালেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনভাবেই খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করতে পারেনি।


এই প্রসঙ্গে জমির মালিকেরা বলেন, তারা চারজন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলা এক হয়ে বছর দেড়েক আগে পবন কুমার নন্দীর কাছ থেকে ১৫ কাঠা জমি কিনেছিলেন। এই জমির উপর তারা সেলাই কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। সেই সেলাই কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে চার হাজার মহিলা স্বনির্ভর হয়ে উপার্জনের সুযোগ পাবেন। জমিটি তারা পাঁচিল দিয়ে ঘিরেও ছিলেন। কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ করেই সেই পাঁচিল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।  তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে বলা হয় তাদের জমি সরকার অধিগ্রহণ করছে। এখানে বিদ্যুতের হাই টেনশন খুঁটি বসানো হবে। বলপূর্বক এই জমি অধিগ্রহণের তারা বিরোধিতা করেন এবং বলেন আগেও একবার এই চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই সময় তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন বলা হয়েছিলো, ঐ জমির পাশে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর জন্য। সে বিষয়ে প্রশাসন রাজি হয়েছিল বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, এদিন হঠাৎ করেই বিশাল পুলিশ বাহিনী সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন তাদের জমির উপরে খুঁটি বসাতে চলে আসে। বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।

পুলিশের আধিকারিকরা দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। ‌যদিও স্থানীয় মহিলারা জেসিবি মেশিনের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ দপ্তর এদিন আর সেই কাজ করে উঠতে পারেনি।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের দুই আধিকারিক বলেন, এদিন কাজ করা যায়নি। তবে আগেই সমীক্ষা করা হয়েছে। সেই মতো কাজ করা হবে। জমির মালিকেরা কিছু দিন সময় চেয়েছেন। তবে, বিদ্যুত দপ্তরের তরফে এই ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য করা হয় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *