DURGAPUR

কালি পুজোর মুখে ডায়রিয়ার প্রকোপ,  মৃত্যু দুই মহিলার, অসুস্থ আরো ৪ জন, এলাকায় আতঙ্ক

বেঙ্গল মিরর, দূর্গাপুর, চরণ মুখার্জি ও  রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ কালি পুজোর মুখে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের কাঁকসা থানার মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলডিহা গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হয়েছে দুই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। আরো ৪ জন অসুস্থ হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মৃত দুই মহিলার নাম হলো  উর্মিলা মুর্মু (৩৫) ও লক্ষী হাঁসদা (৪০) । অসুস্থদেরকে চিকিৎসার জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আচমকাই ডায়রিয়ার এই প্রকোপকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বা বিএমওএইচ ও স্বাস্থ্য কর্মীরা এলাকায় যান। যারা গ্রামে আছেন তাদেরকে সচেতন করা হচ্ছে।এলাকার বাসিন্দাদেরকে কল বা স্ট্রিট ট্যাপের জল খেতে নিষেধ করা হয়েছে। পিএইচই থেকে এলাকায় পানীয়জল সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকার পানীয়জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে বলে এদিন কাঁকসার বিডিও পর্ণা দে জানিয়েছেন।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে কাঁকসার এই এলাকার বাসিন্দারা পেটে ব্যাথা ও বমি,  পায়খানার সমস্যায় ভুগছেন। গত শনিবার প্রথমে উর্মিলা মূর্মুকে একাধিক শারীরিক সমস্যা নিয়ে  দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রবিবার তাকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে । সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আরও চার জনকে। তাদের মধ্যে লক্ষী হাঁসদা নামে এক মহিলার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো। তাকে পরে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। এদিন সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।


এদিকে, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যাওয়ার পরে ঐ এলাকার কয়েকটি টিউবওয়েল সিল করে দেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছানোর জন্য পাইপলাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু সেই জল এখনও পৌঁছায়নি। এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
অসুস্থ এক মহিলার স্বামী মুঠু হাঁসদার অভিযোগ, “আমার স্ত্রীর মাথা ঘুরতে থাকে। বমি, পায়খানা হতে থাকে। অচৈতন্য হয়ে পড়লে স্ত্রীকে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান থেকে পরে বিধান নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানেই চিকিৎসা চলছিলো । পঞ্চায়েত থেকে ট্যাঙ্কারে করে জল দেওয়া হচ্ছে। সোমবার একবার জল দেওয়া হয়েছিল। সেই জলের গুণমান খারাপ। বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলেরই জল খেতে হচ্ছে। এর ফলে বিপদে পড়তে হচ্ছে।”


বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ঘর ঘর জল প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পরিশ্রুত জল পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও রাজ্য সরকার সেই প্রকল্পের নিজেদের নাম দিয়ে চালাচ্ছে। তাও সাধারণ মানুষদের কাছে জল পৌঁছে দিতে পারছে না। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। এই জন্যই মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে একের পর এক সাধারণ মানুষকে। তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। এই সরকার থাকলে এই ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে।


অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কাঁকসা
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য এদিন বলেন, এলাকায় মেডিক্যাল টিম গেছে। গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্স রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে নতুন করে কেউ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া যায়। স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা এলাকায় আছেন। পঞ্চায়েতের তরফে নজরদারি করা হচ্ছে। তার দাবি, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবে।
এদিকে, কাঁকসার বিডিও পর্ণা দে এদিন বলেন, আমরা এলাকার জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। কি কারণে এই ঘটনা ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তর গোটা বিষয়টি দেখছে। এলাকায় পরিশ্রুত পানীয়জল সরবরাহ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *