বার্নপুর ইস্কোর আবাসনে চরম জল সংকট, ডিভিআরআরসিকে চিঠি কতৃপক্ষের
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ বার্নপুর ইস্কো বা সেইল আইএসপির কলোনির আবাসনে চরম জল সংকট। রবিবার ৩ নভেম্বর থেকে বার্নপুরের ইস্কো কারখানার অফিসার ও কর্মীদের আবাসন গুলিতে চরম জলসংকট শুরু হয়েছে বলে কতৃপক্ষের তরফে জানা গেছে। গোটা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ও আবাসন গুলোর জল সংকট মেটাতে ইস্কোর কারখানার তরফে রবিবারই ডিভিআরআরসি বা দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছিলো। তাতে দামোদর নদীতে অতিরিক্ত জল ছাড়ার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে গত ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলার নিতুরিয়া থানার ওসি আসন্ন ছটপুজোর জন্য কুলটির ডিশেরগড় ঘাটে জলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ডিভিআরআরসির কাছে একই আবেদন করেছিলেন। সোমবার এই দুই আবেদনে সাড়া দিয়েছে ডিভিআরআরসি। এদিন সকাল এগারোটা ডিভিআরআরসির ডেপুটি ডিরেক্টর অর্কপ্রভ মজুমদারের সাক্ষরিত একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
তাতে ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার ৪ নভেম্বর থেকে এই ছাড়া শুরু হবে। যা চলবে আগামী ১০ নভেম্বর রবিবার পর্যন্ত। এই কদিন যে অতিরিক্ত জলা ছাড়া হবে, শুধু মাত্র ডোমেস্টিক ড্রিঙ্কিং ওয়াটার বা ঘরোয়া পানীয়জল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এমনও কথা ঐ নির্দেশিকায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকা নিয়ম মেনে ডিভিসি সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে ডিভিআরআরসির তরফে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৪ নভেম্বর সোমবার ও ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেল চারটে থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত মাইথন থেকে ১ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ২ হাজার একর ফুট জল ছাড়া হবে।
একইভাবে, ৬ নভেম্বর বুধবার ও ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ছটা থেকে সকাল নটা পর্যন্ত মাইথন থেকে ২০০ ও ৫০০ একর ফুট জল ছাড়া হবে। পাশাপাশি ৮ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ১০ নভেম্বর রবিবার পর্যন্ত বিকেল চারটে থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত মাইথন ২ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ১ হাজার একর ফুট জল ছাড়া হবে।
জানা গেছে, বার্নপুরে ইস্কো কারখানার প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী এবং অফিসারদের আবাসন আছে। রবিবার থেকে কারখানা কতৃপক্ষের তরফে হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, পানীয়জলের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিভিন্ন কলোনির আবাসন গুলিতে জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে চাহিদা মতো পানীয়জল দেওয়া যাবে না। সব কলোনিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আধঘন্টার মতো জল দেওয়া হবে। এখন এর চেয়ে বেশি বেশি জল দেওয়া যাবে না। জানা গেছে, এদিন সেই ঘোষণা মতো কলোনি কলোনিতে সেই রকম করে জল কোথাও কোথাও দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে সোমবার ইস্কো কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, সব আবাসনেই রবিবার থেকে চরম জল সংকট দেখা দিয়েছে। আমার আবাসনেরও একই অবস্থা। ইতিমধ্যেই কারখানার তরফে দামোদর নদীতে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ডিভিআরআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে।
কারখানার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বও জল সংকটের কথা জানান। তারাও গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
প্রসঙ্গতঃ, বার্নপুরের রিভারসাইডে নেহেরু পার্কের অদূরে ইস্কো কারখানার পাম্প হাউস আছে। দামোদর নদী লাগোয়া এই পাম্প হাউসের মাধ্যমে কারখানা কতৃপক্ষ জল তুলে, তা পরিশ্রুত করে আবাসনে সরবরাহ করে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এতো বৃষ্টি হওয়ার পরেও বার্নপুরের ইস্কো কারখানার আবাসনে জল সংকট কেন দেখা দিলো?