আসানসোলে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ” বার্ষিক সাহিত্য অধিবেশন “
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে আসানসোল শাখার উদ্যোগে সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে ” বার্ষিক সাহিত্য অধিবেশন ” হলো আসানসোলের গুপ্তা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অডিটোরিয়াম হলে। এই অধিবেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সর্বভারতীয় কেন্দ্রীয় সচিব অনিল ধর, শাখার সভাপতি সন্তোষ কুমার সরকার সহ বহু প্রবীণ সদস্যরা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে ৫০ তম বার্ষিক সাহিত্য অধিবেশনের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষক বিভূতি বিশ্বাস।
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে সাহিত্য অধিবেশনে তিনজনকে সম্মানিত করা হয় সংগঠনের তরফে। তারা হলেন সাংবাদিক, সমাজকর্মী, কবি ও আবৃত্তিকার বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যাপিকা ইশা দেব পাল এবং আঞ্চলিক ভাষার গবেষক ঝাড়খণ্ডের কোডারমার বিপুল গুপ্ত। এছাড়াও সাংগঠনিক কাজের জন্য সম্মান জানানো হয় দেবব্রত বোস ও সংগঠনের সদস্য চিকিৎসক ডাঃ সিদ্ধার্থ শংকর সরকারকে ।
সাহিত্য অধিবেশনে প্রায় এক ঘণ্টা বাংলা তথা ভারতীয় সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তা কেন কমছে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ৫০ বছর ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত বিশ্বদেব ভট্টাচার্য্য। বক্তব্যের শেষে একাধিক প্রশ্নেরও তিনি উত্তর দেন।
বিশ্বদেববাবু বলেন, ভারতীয় সংবাদপত্রের বিশেষ করে বাংলা সংবাদপত্রের ২০০ বছর বয়স পেরিয়ে গেছে। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সাংবাদিকতা প্রায় ১০০ বছর হতে চলল। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত সংবাদপত্রগুলি মৌলিক দায়িত্ব ছিল দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করা। স্বাধীনতার পর দেড় দশকের মধ্যেই বেশ কিছু বড় সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীদের হাতে যায়। ফলে সংবাদপত্রের চরিত্র ক্রমশ বদলাতে থাকে। দেখা যায় ভারতবর্ষের ১৫০০-র বেশি শিল্পপতি বা বড় ব্যবসায়ীরা সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের মালিকানায় এসে গেছেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা, তাদের কথা , দুর্নীতি বিরোধী সংবাদ, সরকার বিরোধী সংবাদ সর্বস্তরে ক্রমশ ধামাচাপা পড়েছে। তিনি আরো বলেন, এরই মাঝে পেইড নিউজ এবং বর্তমানে পেস্ট করা জার্নালিজম এসে গেছে। দ্বিতীয়তঃ সংবাদপত্রের পাঠক কমার অন্যতম কারণ সেভাবেই ছোটদের খবর বা ছাত্রছাত্রীদের বা পড়ুয়াদের খবর সংবাদপত্র আজকাল আর না ছাপা। ফলে তারা খবরে কাগজ পড়তে চান না ।
তৃতীয়তঃ কম বয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে ৩৫/৪০ বছর পর্যন্ত বয়সের মানুষেরা এখন ১২ থেকে ১৪ ঘন্টার কাজে ব্যস্ত থাকেন। যেটুকু তাদের খবর দরকার সেগুলো পোর্টাল নিউজে পেয়ে যান। তাই তারাও খবরের কাগজ পড়তে চান না। পাঠক কি ধরনের চাইছে খবরে কাগজে, তা মালিকরা না বুঝে তাদের স্বার্থ মতো খবর পাঠকদের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও পোর্টাল নিউজের প্রচুর খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংবাদপত্র বা টেলিভিশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংস্থা থাকলেও এদের কোন নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। চতুর্থতঃ, সংবাদপত্রের ভাষা বদলেছে। খবরে কাগজের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় পাতা পর্যন্ত পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপনে বিরক্ত হয়ে উঠছে সাধারণ পাঠকরা। এর মধ্যে সময়ের সাথে সাথে যেমন টেলিভিশন, কেবল নিউজ এসেছিল। তারপর প্রায় পাড়ায় পাড়ায় পোর্টাল নিউজ চালু করেছেন অনেকেই। এই কারণে গ্রামে গঞ্জে বা শহরে ছোট সংবাদপত্র গুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এরা সরকারের কাছ থেকে সে হারে বিজ্ঞাপন পায়না। যেমন এক সময় দুই বর্ধমান জেলায় ৬৯ টি সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক খবরের কাগজ ছিলো। এখন সেগুলো কমতে কমতে ডজনখানেকে নেমে এসেছে। তার মধ্যে প্রচার সংখ্যা যথেষ্ট ভাবে কমেছে।
দু/একটি সংবাদপত্র সাপ্তাহিক হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি অবশ্য বাড়িয়েছে। তবে আশার কথা প্রতি বছর নতুন করে কিছু সংবাদপত্র রেজিস্ট্রেশন হয় দেশজুড়ে। পুরনো কিছু সংবাদপত্র বন্ধ হয়। সংবাদপত্র গুলি অসংখ্য সংস্করণ করায় একটি কাগজে সারা রাজ্য বা সারা দেশের খবর মেলেনা। পাঠক কমার এটাও একটা অন্যতম কারণ। এছাড়াও লিটিল ম্যাগাজিন গুলি প্রকাশের সংখ্যা বাড়ছে। এদের পাঠকের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতে হয়তো সংবাদপত্রে কিছু পাঠকের সংখ্যা বাড়বে। তবে তথ্য হিসেবে প্রকাশিত সংবাদপত্র থেকে যাবে যা ব্যক্তিগত ভাবে অন্য মাধ্যমে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই হয়। সর্বোপরি সংবাদপত্রের মান উন্নয়নে সত্তর আশির দশক পর্যন্ত যেভাবে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল সেটা ক্রমশ উঠে গেছে। সাংবাদিক এবং প্রশিক্ষক দুই ক্ষেত্রেই আগ্রহ কমেছে ও দূরত্ব বেড়েছে। এক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের সংগঠন বা প্রেসক্লাব গুলি একসময় বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে বিশ্বদেববাবু মনে করেন।
অন্যদিকে, অধ্যাপিকা ঈশা দেবপাল মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০ বছরে ,তার সাহিত্য এবং তার দুই মহাকাব্য নিয়ে সর্বোপরি তার ব্যক্তি জীবন প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য রাখেন। যা অবশ্যই শ্রোতাদের কাছে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর ছিল। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অন্যান্য শাখার হয়ে প্রতিনিধিদেরও আলাদা করে সম্মান জানানো হয় এদিনের অনুষ্ঠানে।