সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে খোয়া গেলো ১০ লক্ষাধিক টাকা
শেয়ার কেনাবেচায় লাভের আশায় সর্বস্বান্ত বার্নপুরের বাসিন্দা
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ সোশাল মিডিয়ায় ” ফ্রি শেয়ার মার্কেটিং ট্রেনিং”র বিঞ্জাপন দেখে ফাঁদে পড়া। তারপর শেয়ার কেনাবেচা করে লাভের আশায় সর্বস্বান্ত হলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্নপুরের এক বাসিন্দা। সাইবার অপরাধী বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে রামেশ্বর দয়াল নামে ঐ ব্যক্তি খোয়ালেন ১০ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করে দেওয়ার পরে, লাভের অংশ তুলতে গিয়ে রামেশ্বরবাবু বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তখন তার কিছু করার নেই। শেষ পর্যন্ত তিনি দ্বারস্থ হন পুলিশের। দুদিন আগে তিনি গোটা ঘটনার কথা বলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের আসানসোল সাইবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার থানার পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা বিএনএসের ৬১(২), ৩১৬(২), ৩১৮ (৪) ও ৩১৯(২) নং ধারায় একটি ( কেস নং ১০২/২৪) মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের আগষ্ট মাসের শুরুর দিকে বার্নপুরের বাসিন্দা রামেশ্বর দয়াল সোশাল মিডিয়ায় ” ফ্রি শেয়ার মার্কেটিং ট্রেনিং ” সংক্রান্ত একটি বিঞ্জাপন দেখেন। তাতে দেখানো অপশনে তিনি ক্লিক করেন। এরপর তিনি শেয়ার ট্রেডিং বা কেনাবেচা সংক্রান্ত একটি ওয়াটস এ্যাপ গ্রুপে ঢুকে পড়েন। গ্রুপে তিনি দেখেন, অনেকেই শেয়ার কেনাবেচায় টাকা ইনভেস্ট করছে। আর অল্প সময়ের মধ্যে মুনাফা বা লাভও করছে।
এরপর তিনি ডিম্যাট একাউন্ট ( বিশেষ ধরনের ব্যাঙ্ক একাউন্ট, যা দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করা হয়)। এর পাশাপাশি তিনি প্লেস্টোর থেকে ‘ বিবিএল ” নামে একটি এ্যাপ নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করেন। এবার শেয়ার কেনাবেচা করে লাভের আশায় গত ২২ আগষ্ট প্রথম বার ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। কয়েকদিনের মধ্যে রামেশ্বরবাবু দেখেন, ঐ টাকায় তার বেশ লাভ হয়েছে। তিনি তিনি গত ১০ অক্টোবরের মধ্যে মোট ১০ দফায় সবমিলিয়ে ১০ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা শেয়ার কেনাবেচায় বিনিয়োগ করেন।
এরপর সবকিছুই ঠিক ছিলো। বিপত্তি ঘটে, যখন তিনি টাকার কিছু অংশ তুলতে যান। তাকে বলা হয়, আরো কিছু টাকা তাকে ইনভেস্ট করতে হবে। তবেই তিনি টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু তিনি সেই টাকা না দিয়ে ইনভেস্ট করা টাকার অংশ তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাকে গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বা ডিএ্যাকটিভ করে দেওয়া হয়। এরপরই রামেশ্বরবাবু বুঝতে পারেন যে, তিনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে প্রতারিত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গত শুক্রবার আসানসোল সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এই প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার সাধারণ মানুষদেরকে এই সাইবার অপরাধীদের খপ্পরে না পড়ার জন্য সচেতন করছি। লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। তারপরেও কিছু মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। আমাদের আবেদন, সোশাল মিডিয়ায় কোন বিঞ্জাপন দেখে ফাঁদে পা দেবেন না। কোন কিছুতে ক্লিক করবেন বা এ্যাপ ডাউনলোড করবেন না।
প্রসঙ্গতঃ, সাম্প্রতিক সময়ে, আসানসোল দূর্গাপুরে একাধিক মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে কোটি টাকারও বেশি খুইয়েছেন। তারমধ্যে বেশির ভাগটাই হয়েছে এই ধরনের শেয়ার ট্রেডিং বা কেনাবেচায় লাভের আশা করতে গিয়ে।