ডঃ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বার্নপুর, ইস্কো কারখানার পুনর্জীবনে অগ্রণী ভূমিকায় কুর্নিশ,
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ( Dr Manmohan Singh In Burnpur ) দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে গোটা দেশে শোকের ছায়া। ভারতীয় রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তার মৃত্যু অপূরনীয় ক্ষতি। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু স্টিল সিটি বা ইস্পাত নগরী বার্নপুরের জন্য “ব্যক্তিগত ক্ষতি” বলে মনে করেন কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির রাজ্য সম্পাদক তথা ইস্কো কারখানার কর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হরজিৎ সিং। আজ বার্নপুর ইস্কো কারখানা পুনর্জীবনের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ মধ্যে দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেশের অন্যতম হওয়ায় জন্য দৌড়ে রয়েছে। তাই ইস্পাত নগরী প্রয়াত ডঃ মনমোহন সিংকে কুর্নিশ জানায়।




পুরনো সেই দিনগুলোর (২০০৬ সাল) কথা স্মরণ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের কথা বলতে গিয়ে শুক্রবার হরজিৎ সিং জানান, ঐ সময় ইস্কো কারখানা ১৪ বছর ধরে বিআইএফআরে ছিলো। যার কারণে কারখানাটি কোথাও থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছিলো না। শ্রমিকরা কখনও ২ মাস পরে, কখনও বা ৩ মাস পরে বেতন পাচ্ছিলেন। তখন কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্ব ইউপিএ -১ সরকার চলছে। প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দেশের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ডঃ মনমোহন সিং। আমরা তখন ইস্কো কারখানাকে বাঁচানোর জন্য পাঁচ শ্রমিক সংগঠন মিলে ” ইস্কো সেভ কমিটি ” তৈরি করেছি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছিল। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান।

হরজিৎবাবু আরো বলেন, আমরা দিল্লিতে গিয়ে দুবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করি। বাংলায় ইস্কো কারখানার গুরুত্ব এবং ইন্দিরা গান্ধী কিভাবে ১৯৭২ সালে বার্নপুরের এই কারখানাটিকে জাতীয়করণ করেছিলেন সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছিলাম। ডঃ মনমোহন সিংকে বলা হয়েছিল যে হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের পরিবার এই কারখানার উপর নির্ভরশীল। তাই এই কারখানাটিকে বাঁচানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডঃ মনমোহন সিং আমাদের সব শুনেছিলেন। সেগুলিকে তিনি গুরুত্ব সহকারে নেন। অবশেষে এই কারখানাটিকে ২০০৬ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি সেলের সাথে সংযুক্তিকরণ করা হয়। প্রথমে ঠিক হয় ২.৫ মিলিয়ন টন উৎপাদন করা হবে। বিনিয়োগ করা হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সময় বেশি হওয়ার কারণে তা বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা বার্নপুর ইস্কো কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছিলো।
২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর বার্নপুরে এসে ডাঃ মনমোহন সিং, তৎকালীন ইস্পাত মন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে কারখানার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ ( মর্ডানাইজেশন ও এক্সপানসান) স্টোন লে ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি প্রস্তর করেছিলেন। নিরাপত্তার কারণে বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপের ভেতরে অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিলো। শ্রমিক নেতা বলেন ডঃ মনমোহন সিংয়ের কারণেই এই কারখানাটি বেঁচে গেছে। বর্তমানে এই কারখানা উৎপাদন ২.৫ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ৪.৫ মিলিয়ন টন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ৭ মিলিয়ন টন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ করা হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৯ সালে কারখানা আরো বৃহত্তর হবে। তাই আমরা মনে করি ডঃ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যু বার্নপুরের মানুষদের জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি।
প্রসঙ্গতঃ, সেদিনের উদ্বোধনের মঞ্চে আরো দুজন ছিলেন। তারা হলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি ও আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি আগেই প্রয়াত হয়েছেন।