দীর্ঘদিন খোঁজ নেই কাউন্সিলরের, দলীয় নেতৃত্বের দিকে আঙুল দলেরই একাংশের
কুলটিতে আবারও তৃনমুল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে, কটাক্ষ বিজেপির
বেঙ্গল মিরর , কুলটি ও আসানসোল , রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোল পুরনিগমের কুলটির ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলর সেলিম আখতার দীর্ঘদিন ধরে ফেরার রয়েছেন। এবার সেই কাউন্সিলারকে নিয়ে কুলটিতে আরো একবার রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এলো। কাউন্সিলার ” নিখোঁজ ” থাকার ঘটনায় দলের জেলা নেতৃত্বকেই কাঠগঠায় তুলেছেন কুলটি ব্লকের একাংশ নেতা। শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব গোটা বিষয়টিকে একেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে, পাত্তা না দিলেও, বিড়ম্বনার মধ্যে অবশ্যই পড়েছে। শাসক দলের এই গোষ্ঠী কোন্দলকে স্বাভাবিক ভাবেই কটাক্ষ করতে ছাড়েনি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।




অভিযোগ, ৬৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সেলিম আখতার বাজার প্রচুর টাকার দেনা রয়েছে। সেই টাকা ফেরত দিতে না পেরেই, তিনি নাকি এলাকা ছাড়া, দাবি এলাকার বাসিন্দাদের । তাই তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পরে, তার কিস্তি পরিশোধ করেননি। ঋণের টাকা বেড়ে যাওয়ায় দিন কয়েক আগে ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ কাউন্সিলারের বাড়িতে তালা লাগিয়েছে।
সোমবার সকালে কুলটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর আখতার হোসেন এবং প্রাক্তন ব্লক সভাপতি বিমান আচার্য্য এই প্রসঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তারা অভিযোগ করেন, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছেন। তিনি পলাতক। তার পেছনে কি কারণ রয়েছে, তাকে কি এলাকা থেকে পালাতে হতে বাধ্য করা হয়েছে এসব নিয়ে দলের কেউ কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না। কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ও একবারও ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে আসেননি। তিনি কুলটি দলের তরফে দায়িত্বে রয়েছেন। তারা আরো বলেন, কাউন্সিলার ছাড়া ঐ ওয়ার্ড কি ভাবে চলছে? ওয়ার্ডের কাজ কিভাবে হচ্ছে? ওয়ার্ডের মানুষদের কোন সমস্যা হচ্ছে কি না, তাও দেখার কেউ নেই। কুলটিতে দল ৩৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে।জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নিজের ওয়ার্ডে দল ১০ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। শাসক দলের দুই নেতা বলেন, সেলিম আখতার কেন পলাতক এবং তার কি হয়েছে তার দায় দল না নিতে পারে। তবে আজ যখন তিনি তার ওয়ার্ডে নেই, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ সমস্যায় পড়ছেন, এটা তো দেখার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ওয়ার্ডের লোকজনের সাথে কথা বলে এখানকার মানুষেরা যাতে নাগরিক সুবিধা পেতে কোনো সমস্যায় না পড়েন তা নিশ্চিত করুন। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। এই ওয়ার্ডটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কোন কথা বলার প্রয়োজন মনে করিনা। আর কেউ যদি রাতের অন্ধকারে কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে যায়, সে বিষয়ে দলের নেতৃত্ব কি করতে পারে? সেখানকার মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা নিয়ে দল যথেষ্টই ওয়াকিবহাল রয়েছে। তা নিয়ে যে কেউ নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। তিনি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন যে তৃনমুল কংগ্রেস আমার ওয়ার্ডে ১০ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে, যা একেবারেই ভুল। গত লোকসভা নির্বাচনে দল কুলটিতে একমাত্র আমার ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলো। এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও আমার ওয়ার্ডে দল এগিয়ে ছিলো। তাই যারা এ কথা বলছেন তারা সম্পূর্ণ ভুল বলছেন, আজকে তারাই হেরে গেছেন গত নির্বাচন।তিনি সরাসরি বলেন, যারা এই ধরনের কথা বলছেন তারাই আসলে গত নির্বাচনে তৃনমুল কংগ্রেসের পতাকা হাতে নিয়ে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন।
এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক বলেন, যে বা যারা কারোর দিকে আঙুল তোলেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে হাতের পাঁচটি আঙুল। অন্য কারোর দিকে একটা আঙুল তুলে তাকানো যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাকি চারটি আঙুল নিজের দিকে থাকে। সেজন্যই যদি কেউ কাউকে দোষারোপ করে, তাহলে আগে ভাবতে হবে যে, তিনি ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়নমূলক কি কাজ করেছেন? তিনি বলেন, এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার চলছে। এখানে ব্যক্তির চেয়ে ব্যবস্থা বড়। উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কোনও নাগরিকের কোনও অভিযোগ নেই। কারণ সেখানে কাউন্সিলর না থাকলেও উন্নয়ন কাজগুলি নিজস্ব গতিতে হচ্ছে। আগামীদিনেও তা হবে।
এদিকে, এই প্রসঙ্গে বিজেপির নেতা অমিত গরাই বলেন, গোটা বিষয়টি ঐ দলের একেবারে নিজস্ব ব্যাপার। তবে ওয়ার্ডের মানুষদের ভেবে দেখা উচিত যে, তারা কাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন।