ASANSOL

গুজরাটে বেড়াতে গিয়ে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা, মৃত আসানসোল এক মহিলা সহ বাংলার ৫ পর্যটক

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* গুজরাটে মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনা। পর্যটকের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে একটি ডাম্পারের পেছনে। রবিবার বিকেলে হওয়া সেই ঘটনায় মৃত্যু হলো আসানসোলের বাসিন্দা এক মহিলা সহ বাংলার ৫ পর্যটকের। আহত হয়েছেন আরো চারজন। এই ঘটনায় মারা গেছেন গাড়ির চালকের। সবমিলিয়ে এই ঘটনায় মারা গেছেন ৬ জন। গাড়িতে চালক সহ মোট ১০ জন ছিলেন।  আসানসোলের বার্নপুর রোডের কোর্ট মোড় এলাকার বাসিন্দা মৃত মহিলার নাম শুক্লা চট্টোপাধ্যায় (৫৭)। এই ঘটনা আহত চারজনের মধ্যে রয়েছেন শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী মানবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও। তার শারীরিক অবস্থা যথেষ্টই আশঙ্কাজনক।
সোমবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো, ঘটনার খবর প্রতিবেশীরা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন। জানা গেছে, শুক্লাদেবীর ছেলে কলকাতা থেকে ইতিমধ্যেই গুজরাটে চলে গেছেন। এদিন মানবেন্দ্রবাবুর ভাই মলয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, দাদা,ও বৌদি ও আত্মীয় সহ ৯ জন গুজরাটে বেড়াতে গেছিলেন। বুধবার তাদের ফিরে আসার কথা ছিলো। তারমধ্যে রবিবার বিকেলে দাদাদের গাড়ির সেখানে দূর্ঘটনায় পড়ে বলে আমরা এক আত্মীয়ের ফোনে রাতে জানতে পারি। ভাইপো সেখানে গেছে।

File photp


জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা থেকে গুজরাটে বেড়াতে গেছিলেন নজনের পর্যটকদের একটি দল। তাদের ইচ্ছা ছিল, গুজরাটের গির অরণ্যে সিংহ দেখা। কিন্তু তার আগেই একটি মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো সেই দলের ৫ জনের। মারা গিয়েছেন পর্যটকদের গাড়ির চালকও। মৃতরা সবাই পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা। সঙ্কটজনক অবস্থায় গুজরাটের হাসপাতালে ভর্তি ওই দলের বাকি চার জন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটেয় দুর্ঘটনাটি ঘটে আমেদাবাদ-গুজরাট জাতীয় সড়কের লিম্বডি তালুকের নবি মোরওয়াড় গ্রামের কাছে। মৃতদের নাম দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, রীতা মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, অনিকেত তা ও শুক্লা চট্টোপাধ্যায়। মৃতদের মধ্যে দেবব্রত, রীতা ও ঋতব্রত সম্পর্কে বাবা, মা ও ছেলে । তারা বাঁকুড়ার বাসিন্দা। দেবব্রতবাবু চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে পূর্ব বর্ধমানে থাকতেন। একই পরিবারের সদস্য হিসেবে অনিকেত ও শুক্লা তাদের আত্মীয়। মৃত গাড়ি চালক গুজরাটের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় আহত সোমনাথ তা, মুকুল তা, রিম্পা তা ও মানবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভর্তি রয়েছেন রাজকোটের সুরিন্দরনগর শিবসাগর হাসপাতালে। তার মধ্যে সোমনাথ ও মানবেন্দ্রর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। তাই তাদেরকে পরে স্থানান্তর করা হয়েছে আইসিইউতে। মানবেন্দ্রবাবুর স্ত্রী শুক্লাদেবী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শুক্লা ও গুরুতর জখম মানবেন্দ্র পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা। অন্য দিকে, দেবব্রত, রীতা ও ঋতব্রত থাকতেন পূর্ব বর্ধমানের বাদশাহি রোড এলাকায়। আর এক মৃত অনিকেত তা-য়ের বাড়ি বর্ধমানের শ্যামলাল পাড়ায়।


পুলিশ ও পরিবারে্ সূত্রে জানা গেছে, ৯ জনের পর্যটকদের এই দল গত রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি আসানসোল স্টেশন থেকে ট্রেনে গুজরাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। আগামী বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি  তাদের ফিরে আসার কথা ছিল। রবিবার সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তারা আমেদাবাদ থেকে রাজকোটের উদ্দেশে একটি ট্রাভেলর গাড়ি নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। রাস্তায় বিকেলে  লিম্বডি তালুকের নবি মোরওয়াড় গ্রামের কাছে একটি ডাম্পারের পিছনে গিয়ে ধাক্কা মারে পর্যটকদের গাড়িটি। ধাক্কা এতোটাই জোরে ছিলো যে সংঘর্ষে মানবেন্দ্রবাবুদের গাড়ির সামনের অংশ একেবারে দুমড়েমুচড়ে যায়। এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।  ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গাড়ি চালক সহ রীতা মুখোপাধ্যায় , ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় ,অনিকেত তা ও শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ের। পরে হাসপাতালের মৃত্যু হয় দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের।    জানা গেছে, মৃতরা যে এলাকায় থাকেন সেখানকার থানার পুলিশ গুজরাটের যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেই থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ময়নাতদন্তের পরে কিভাবে সেখান থেকে মৃতদেহ বাংলায় ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কথাবার্তা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *