DURGAPUR

সাদা গাড়ির মালিকের খোঁজে ব্যবসায়ীর বাড়ি ও গোডাউনে হানা পুলিশের, নমুনা সংগ্রহ সিআইডির

পানাগড় কান্ড : ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পরেও অভিযুক্তরা অধরা

বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* আসানসোল দূর্গাপুরের সিপি বা পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় কাঁকসা থানায় বসে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, কোন ইভটিজিং হয় নি। দুটি গাড়ি নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করছিলো। আর তা থেকেই এই দূর্ঘটনা। তিনি আরো বলেছিলেন, তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু পানাগড়ের ঘটনার পরে দেড় দিন বা ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও, মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। আর এখানেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মৃত যুবতী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মা সহ অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি, পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে।


এদিকে, মঙ্গলবার সকালে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির একটি দল এই ঘটনার তদন্ত করতে কাঁকসা থানায় আসে। সেখানে তারা দূর্ঘটনায় পড়া দুটি গাড়ির নমুনা সংগ্রহ করেন। একইসাথে তারা এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসারদের নিয়ে পানাগড়ে যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিলো, সেখানে আসেন। এই এলাকাটি তারা ঘুরে দেখেন।


অন্যদিকে, এদিন সকালে সাদা এসইউভি গাড়ির মালিক পানাগড়ের কাবাড়ি পট্টির বাসিন্দা ব্যবসায়ী বাবলু যাদবের খোঁজে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি ( কাঁকসা) সুমন জয়সওয়ালের নেতৃত্ব পুলিশ তার বাড়ি ও গোডাউনে হানা দেয়। কিন্তু বাবুলকে পুলিশ পায়নি। পুলিশ বাবলুর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। গোডাউনে কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলেছেন। পরে এসিপি ( কাঁকসা) বলেন, বাবলু যাদব নিজেই সাদা গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। পানাগড়ের কাবাড়ি পট্টির বাসিন্দা বাবলু যাদব পলাতক রয়েছে।


       নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে একটি গাড়িতে রবিবার রাতে একটি বিয়ে বাড়ির কাজে গয়া যাচ্ছিলেন হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের কর্ণধার পেশায় নৃত্য শিল্পী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। তার সঙ্গে ছিলেন মিন্টু মন্ডল ও প্রদীপ দত্ত। তারা দু’জনেই হুগলি জেলার বাসিন্দা। এছাড়াও ছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা মন্টু ঘোষ। গাড়ি চালক ছিলেন হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা রাজদেও শর্মা। রবিবার রাত বারোটা পরে পানাগড়ে একটি সাদা রঙের এসইউভিতে থাকা জনা পাঁচেক যুবক চন্দননগরের বাসিন্দা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় (২৭) কে উত্যক্ত করছিলো বলে অভিযোগ। সাদা গাড়িটি সুতন্দ্রাদের গাড়িটিকে বেশ কয়েক কিলোমিটার পিছু ধাওয়া করে। পরে পানাগড় রাইস মিল রোডে সুতন্দ্রাদের গাড়িটি উল্টে যায়। তাতে সুতন্দ্রার মৃত্যু হয়। বাকিরা আহত হন। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পর থেকেই এই অভিযোগ তুলে আসছিলেন সুতন্দ্রার সঙ্গীরা, বিশেষত তার গাড়ির চালক। গোটা বিষয়টি নিয়ে সোমবারই কাঁকসা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মিন্টু মন্ডল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিএনএসের ২৮১,১২৫(এ)/১০৫/ ৩২৪(৪) নং ধারায় মামলা করে। শুরু হয় তদন্ত।


এদিকে, সোমবার জানা যায়, সাদা এসইউভি গাড়িটি ব্যবসায়ী বাবলু যাদবের। কিন্তু বাবলুকে সোমবারের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার বাবলুর এক কর্মী জিয়া লালকে জেরা করে। সে জানায়, রবিবার সন্ধ্যা সাতটার পরে এই সাদা গাড়ি নিয়ে বাবলু বেরিয়েছিলো। তার সঙ্গে ছিলো গোডাউনের চার কর্মী। তাদের নাম কি পুলিশ জেনেছে ? তাদের নাম কেন সামনে আসছে না ? তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কি ব্যর্থ? না, বাবলুদের বাঁচানোর কেউ চেষ্টা করছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অধরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *